না-ফেরার দেশে চলে গেলেন সংবাদ-উপস্থাপক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক অধ্যাপক ড. গোলাম মুরশিদ। গতকাল লন্ডন সময় বেলা ১১টায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গোলাম মুরশিদের স্ত্রী এলিজা মুরশিদের বরাত দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব স্টাডিজের অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার এ তথ্য জানান। এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত দাফনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
গোলাম মুরশিদের জন্ম ১৯৪০ সালে বরিশালে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর পিএইচডি করেন ঐতিহাসিক ডেভিড কফের তত্ত্বাবধানে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে শিবনারায়ণ রায়ের তত্ত্বাবধানে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেন। গোলাম মুরশিদ এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে অধ্যাপনার পাশাপাশি ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)-এর সংবাদ পাঠক এবং উপস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণায় জড়িত ছিলেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের একজন গবেষণা-সহযোগী ছিলেন। ভয়েস অব আমেরিকায় তিনি প্রায়ই কণ্ঠ দিতেন।
১৯৮৪ সাল থেকে লন্ডনপ্রবাসী গোলাম মুরশিদের অবসরজীবন কাটছিল আঠারো শতকের বাংলা গদ্য এবং মাইকেল-জীবন নিয়ে গবেষণা করে। ২০২১ সালে তিনি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। এর আগে প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য গোলাম মুরশিদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান ১৯৮২ সালে।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালার ওপর ভিত্তি করে রচিত গ্রন্থ ‘রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভের ওপর ভিত্তি করে লেখা ‘সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও বাংলা নাটক’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। তাঁর লেখা অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে-‘সংকোচের বিহ্বলতা’, ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া : নারী প্রগতির একশো বছর’, ‘কালান্তরে বাংলা গদ্য’, ‘যখন পলাতক’ এবং ‘বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার আদি-পর্ব’। গোলাম মুরশিদ কখনো হাসান মুরশিদ ছদ্মনামেও লিখতেন।