বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজধানীতে শতাধিক ছিনতাই হটস্পট

হটস্পটের তালিকায় রয়েছে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, খিলগাঁও, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, ভাটারা, শেরেবাংলা নগর, কলাবাগান, রামপুরা, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, উত্তরা পশ্চিম ও পল্লবী

আলী আজম

রাজধানীতে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। প্রতিটি স্থানে এই মুহূর্তে বড় আতঙ্কের নাম ছিনতাই। বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের ভয়ে পথচারীদের তটস্থ হয়ে চলাফেরা করতে হয়। শুধু সন্ধ্যা বা রাত নয়, দিনদুপুরেও এখন ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সশস্ত্র ছিনতাইকারী চক্র ছিনতাই কাজে ব্যবহার করছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। এদের টার্গেট ভ্যানেটিব্যাগ, হাতব্যাগ, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোনসেট। রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিতে বেপরোয়া ছিনতাই বাড়ছে। এই ছিনতাইকারীদের হাতে যখন তখন প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ। অনেকে আবার আহত হয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে করুণ পরিণতি।

গত ৩ সেপ্টেম্বর কদমতলীর মেরাজনগরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মো. হাসেম (৪৮) নামে কাঁচামাল বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতের জখম ছিল। ফরিদপুর সদর উপজেলার পূর্ব নিশান গোপালপুর গ্রামের আকবর মল্লিক এবং কুলসুম বেগমের ছেলে হাসেম। গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে হাজারীবাগের সিকদার মেডিকেলের পাশে যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (মিসুক) চালক সাদেকিনকে (২০) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। উদ্ধারকারী সুমন বলেন, সিকদার মেডিকেলের ডেন্টাল বিভাগের রাস্তায় খালি মাঠে হঠাৎ চিৎকার শুনতে পাই। দূর থেকে দেখতে পাই, এক যুবককে কয়েকজন মিলে হত্যার চেষ্টা করছে। তখন সে চিৎকার করছিল। বিষয়টি দেখে আমিও চিৎকার শুরু করি, মানুষজন বের হতে শুরু করে, এরই মধ্যে ছিনতাইকারীরা তার কাছে যা পেয়েছে তাই নিয়ে অটোরিকশা ফেলে  দ্রুত পালিয়ে যায়। গত ৩১ আগস্ট ভোরে সবুজবাগের বাসাবো ফ্লাইওভারের নিচে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. ইউসুফ সাধু (৪০) নামে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়। মৃতের ভাতিজা শাকিল মিয়া বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাটির মালিক তার চাচা ইউসুফ। তিনি নিজেই প্রতিদিন রাত থেকে সকাল পর্যন্ত রিকশাটি চালাতেন। ভোরে বাসাবো ফ্লাইওভারের নিচে তার রিকশাটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে পেটে ও বুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলার চম্পকনগর গ্রামে। গতকাল সকালে দারুসসালাম এলাকায় ছিনতাইকারীর গুলিতে মাংস ব্যবসায়ী মো. রইচ ব্যাপারীকে গুলি করে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। তিনি গাবতলী হাটে গরু কেনার জন্য রিকশায় টেকনিক্যাল পাম্প থেকে একটু সামনে গেলে চার ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে। পরে ডান পায়ে এক রাউন্ড গুলি করে রইচের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহবাগ থেকে সেগুনবাগিচা আসছিলেন এক নারী। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মোড়ে আসলে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তার ভ্যানিটিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগে মোবাইল ফোন, টাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছিল। গত ২৯ আগস্ট দুপুরে টিকাটুলি ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিল দিলকুশার দিকে হেটে যাচ্ছিলেন ইমরান। বঙ্গভবন মোড়ে একটি সিএনজি সামনে এসে তার গতিরোধ করে। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে দুজন অস্ত্র ঠেকিয়ে ইমরানের কাছ থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। শুধু এ ঘটনাগুলোই নয়, এমন চিত্র এখন রাজধানীজুড়ে। ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। রাজধানীতে ছিনতাইয়ের শতাধিক হটস্পট রয়েছে। হটস্পটের তালিকায় রয়েছে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, খিলগাঁও, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, ভাটারা, শেরেবাংলা নগর, কলাবাগান, রামপুরা, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, উত্তরা পশ্চিম ও পল্লবী এলাকা। এ ছাড়া পান্থপথ, টিএসসি, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল ও তেজগাঁও রেলস্টেশন ছিনতাইয়ের অন্যতম হটস্পট। শুধু রাতের আঁধারে নয়, প্রকাশ্য দিনের বেলায়ও সর্বস্ব লুটে নিয়ে মুহূর্তে সটকে পড়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে ছিনতাইকারী। সম্প্রতি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা আতঙ্কিত করে তুলেছে নগরবাসীকে। প্রতিদিন একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও থানায় মামলার সংখ্যা কম। ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনাই পুলিশের কাছে যাচ্ছে না। কারণ ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিদের থানায় অভিযোগে রয়েছে অনীহা। ছিনতাইকারীরা মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত তৎপর থাকে। ভোরে বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশন থেকে বাসামুখী অথবা বাসা থেকে স্টেশনমুখী যাত্রীদের তারা লক্ষ্যবস্তু বানায়। নির্জন গলিতে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের টাকা-পয়সা কেড়ে নিচ্ছে। আবার গাড়ি ও মোটরসাইকেলে করে পথ আগলে মানুষের টাকা, মুঠোফোন বা স্বর্ণালংকার কেড়ে নেয় কোনো কোনো ছিনতাই চক্র। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, ইদানীং কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রোধে চেকপোস্ট, ফুট পেট্রোলিং, টহলসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব কৌশল কাজে লাগিয়ে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধে র‌্যাব সর্বদা তৎপর রয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর