মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
মতবিনিময় সভায় শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের সংস্কৃতি ভাঙতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ভয়ের সংস্কৃতি ভেঙে একটি বৈষম্যহীন ও নিপীড়নমুক্ত মানবিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে হবে বলে অভিমত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এ অভিমত জানান। এ লক্ষ্যে সভায় একটি প্রস্তাবনা প্রকাশ করা হয়।

‘শিক্ষা-ভাবনা-আমাদের প্রস্তাব’ এবং ‘প্রশাসন ও ক্ষমতা কাঠামোর পুনর্বিন্যাস’ নামে দুই পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু; একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের অনুপাত অন্তত ৪০ সংখ্যায় নিয়ে আসা; বাজার চাহিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন বিভাগে ভর্তি ৪০ জনের মধ্যে রাখা; পিএইচডি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাসিক অন্তত ৫০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া; শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন চাকরি ও ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

একই সঙ্গে ক্ষমতা কাঠামোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরিচালনা কমিটি এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, প্রভোস্ট ও প্রক্টর নির্বাচনের রূপরেখা দিয়েছে সংগঠনটি। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বি-ধাপ পদ্ধতি গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথমে উচ্চতর ডিগ্রি বিবেচনায় একাডেমিক কমিটির একটি শর্টলিস্ট তৈরি করা এবং পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ ও প্রশ্ন উত্তর এবং নিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ও জনসংখ্যার বিকেন্দ্রীকরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে এ প্রস্তাবে।

আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত বিচারে সমাজের প্রতিষ্ঠান। এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে। ফলে তারা যেভাবে চাইবে, সেভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় চলবে।

আলোচক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু শিক্ষক নন, ছাত্রদের স্টেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের সঙ্গে রাষ্ট্রের সংস্কার জড়িয়ে আছে। রাষ্ট্র যদি সংস্কার না হয়, তাহলে সবকিছু পুনরায় ফিরে আসার বিপদ আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠার জন্য যা যা দরকার, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। তবে রাজনীতির কারণে গত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা বেশি ভর্তি হয়। একটি সিটের জন্য তাদের মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিতে হতো; গণরুম-গেস্টরুমে পচে-গলে তার স্বপ্ন বিনষ্ট হতো; শিক্ষার্থীদের জিম্মি করার জন্য নতুন আবাসিক হল নির্মাণ করা হতো না। এখনো নব্বই দশকের কারিকুলামে পড়ানো হয়। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে এখন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আমরা চাই দলীয় দখলদারি রাজনীতি ক্যাম্পাসে থাকবে না। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় লিখিত প্রস্তাবনা পাঠ করেন ড. শাহমান মৈশান, ড. খোরশেদ আলম, ড. আবদুল্লাহ আল মামুন ও অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর