বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম বিভাগে বন্যা

ঘুরে দাঁড়ানোই চ্যালেঞ্জ

♦ বিধ্বস্ত যোগাযোগব্যবস্থা ♦ ১ হাজার কিমি আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

ঘুরে দাঁড়ানোই চ্যালেঞ্জ

চট্টগ্রাম অঞ্চলে আগস্টের সর্বনাশা বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে শত শত কিলোমিটার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক। বিভিন্ন এলাকায় ব্রিজ, কালভার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এ ভয়ংকর ক্ষতচিহ্ন ফুটে উঠেছে। এ অবস্থায় যানবাহন চলাচল চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো পর্যন্ত সর্বনাশা বাস্তবতা থেকে উত্তরণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। সংশিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ঘুরে দাঁড়নোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

জানা গেছে, সম্প্রতি বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টের তালিকা করা হয়। এর মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার কিলোমিটারের বেশি আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কেবল ফেনীতেই ৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে ডুবে ছিল। ফলে এ জেলার ৩৪২টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। এ জেলায় অন্তত ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট চরম মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্রিজ ও দুটি কালভার্ট নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। সব মিলিয়ে ২৫০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে ২০০ কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন

মাহমুদ আল ফারুক, নির্বাহী প্রকৌশলী

ফেনী জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে ২০০ কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন হবে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বরাদ্দের চাহিদা তৈরি করে উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে পুরোদমে সংস্কার হবে। তবে এখন অধিদপ্তরের আগের বরাদ্দ থেকে ছোটখাটো সংস্কার করে যোগাযোগ সচল করা হচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে ছোটখাটো সংস্কার শেষ হবে। আর দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারে দুই বছর লেগে যেতে পারে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় পরশুরাম উপজেলার কালী কৃষ্ণনগর সড়ক, সুবার বাজার সড়ক, সোনাগাজীর কসকা সুলতানপুর সড়ক, সদর উপজেলার বেশকিছু সড়ক, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, দাগনভ্ঞূা উপজেলার বেশকিছু সড়ক, মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক, করেরহাট রামগড় সড়ক, আবুরহাট সড়ক, কমরআলী সড়কসহ আঞ্চলিক সড়ক বন্যায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রামীণ সড়কগুলোতেও দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে।

সরেজমিনে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার সড়কে বিশাল আকৃতির গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কের বেশির ভাগ অংশের বিটুমিনের প্রলেপ উঠে গেছে। অনেকাংশে মাটি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলোতে পড়ে প্রায়ই বিকল হচ্ছে যানবাহন। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। একই অবস্থা দেখা গেছে করেরহাট রামগড় সড়কেও। ওই সড়কে বারইয়াহাট থেকে করেরহাট হয়ে রামগড়-খাগড়াছড়ির দিকে ভারী মালবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস চলাচলের কারণে সড়কের অবস্থা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী রনি সাহা জানান, বন্যায় মিরসরাইয়ের আঞ্চলিক, সংযোগ সড়ক এবং বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক মিলিয়ে ১৮০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়েছে।

সংশিষ্টরা বলছেন, ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দাসহ দায়িত্বশীলদের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগেই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে তাদের ধারণা।

সর্বশেষ খবর