শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সমাবেশ

প্রতিদিন ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সমাবেশ

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্যাতন বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে স্টুডেন্টস ফর সোভারেনিটি। অন্যদিকে, খাগড়াছড়িতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বাড়িতে হামলার অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে মিছিল ও অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা। এ ছাড়া, একই অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে, বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জম্মু শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করে ও বান্দরবানে আদিবাসী ছাত্র সমাজ মানববন্ধন করে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক নিরস্ত্র বাঙালি নাগরিক হত্যা, মসজিদে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট বন্ধ ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে স্টুডেন্টস ফর সোভারেনিটি। গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করেন। এরপর মিছিলটি পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।

এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্মল্যান্ড করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, বিভিন্ন এনজিও-মিশনারির মাধ্যমে           ‘আদিবাসী’ শব্দের প্রচলন বন্ধ করা, ভারতের মদতে পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নির্যাতন বন্ধ করা, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা নিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বুধবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পানখাইয়াপাড়ায় চুরির অভিযোগ এনে মো. মামুন নামে স্থানীয় এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এর বিচার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায়। এরপর পার্শ্ববর্তী বাঘাইছড়ি, লংগদু, সাজেক থেকে চাঁদের গাড়ি যোগে উপজাতি যুবকদের কয়েকটি দল এসে লারমা স্কয়ারে পাহাড়ি ও বাঙালিদের ঘরবাড়ি-দোকানপাটে লুটপাট চালায় ও আগুন দেয়। বাঙালি ছাত্র ও বাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করে তারা। সন্ত্রাসীরা এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা চলছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা রাষ্ট্র ‘জুম্মল্যান্ড’ বানাতে চায় এই সন্ত্রাসীরা। পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙালিদের তারা ‘সেটেলার’ বলে। কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিকরা সেটেলার কীভাবে হয়! তারা পাহাড় থেকে সেনা হঠাতে চায়, তারা পাহাড়ের বাঙালিদের ওপর হত্যা লুটপাট চালায়, তারা পাহাড়ে শান্তি চায় না। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পাহাড়ের এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের সমূলে উৎখাত করতে হবে। পাহাড়ে বাঙালি ও উপজাতিদের সমান অধিকার ও সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পাহাড়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেন তারা। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক ধারাবাহিকভাবে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর আক্রমণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে তারা চার দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থানরত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সব প্রকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরস্ত্র সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে সেনাবাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা জায়গাগুলোতে সেনা ক্যাম্প বাড়ানো ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অসাংবিধানিক ধারাগুলো বাতিল করা। অন্যদিকে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়িদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে যান। প্রায় ২০ মিনিট তারা শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে রাখেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন। এ সময় তারা পাহাড়িদের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বিক্ষোভের আয়োজকদের অন্যতম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সতেজ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়।

আমরা পাহাড়িরা বারবার বলে এসেছি পাহাড়ের সমস্যাকে জিইয়ে রাখার কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের ওপর এ ধরনের হামলা বারবার সংঘটিত হচ্ছে। পাপড়ি চাকমা হামলায় জড়িতদের বিচার ও পাহাড়ে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানান। নিপ্পন চাকমা বলেন, আমরা যখন আমাদের অধিকার আদায়ে কথা বলি, তখন আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হয়। আমাদের ওপর আঘাত এলে অস্তিত্ব রক্ষায় আমরা বসে থাকব না।

জাবি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, দীঘিনালাসহ পাহাড়ি অঞ্চলে সম্প্রতি সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জম্মুদের ওপর হামলা, লুটপাট, হত্যা, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধ্যয়নরত আধীবাসী শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টা থেকে প্রায় ২০ মিনিট ধরে এ অবরোধ কর্মসূচি চলে। অবরোধ চলাকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে জাবির প্রধান ফটক থেকে উভয় লেনে প্রায় ১ কিলোমিটারজুড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এর আগে, বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্র থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডেজিনাস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইগিমি চাকমা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যা বন্ধ করা, অবিলম্বে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা, সেটেলার বাঙালি পুনর্বাসন বন্ধ করা, ইন্টারনেট বন্ধ করে গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা, হামলা-হত্যা-অগ্নিসংযোগে জড়িতদের বিচার, আদিবাসী হত্যায় নেতৃত্বদানকারী সেনা কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। দাবিগুলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে জরুরি সেবা ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রামের নৌ-যোগাযোগ, দোকানপাট ব্যতীত অন্য সব সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন ইগিমি চাকমা।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে আদিবাসীদের ওপর হামলা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে বরিশাল নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এ বিক্ষোভ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। পরে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।

রাবি প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য অঞ্চলে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জম্মু শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় জম্মু পরিবারে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ঘরবাড়ি- দোকানে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গতকাল সকালে বান্দরবান শহরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলার সম্মিলিত আদিবাসী ছাত্র সমাজ। প্রতিবাদের কর্মসূচি হিসেবে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে রাজার মাঠ থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি।

সর্বশেষ খবর