সত্তরের দশক পর্যন্ত রাজশাহীর পদ্মায় মিলত ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। আকারে বড় ও স্বাদে অতুলনীয়, দামে কম ও সহজলভ্য হওয়ায় সবার নাগালে ছিল। পদ্মার উজানে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীতে ইলিশের পরিমাণ কমতে থাকে। যা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। তবে পদ্মার পানির গভীরতা বাড়ানো গেলে ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ করলে আবারও ইলিশের পুরনো সেই সুদিন ফেরানো সম্ভব-মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি ১৯৬০ সালের আগেও রাজশাহীর বাজার থেকে ১ টাকা দিয়ে সোয়া কেজি ওজনের চারটি ইলিশ কিনেছি। তখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও হাটে ইলিশ বেচাকেনা হতো। অনেকেই ফেরি করে গ্রামে গ্রামে ইলিশ বিক্রি করতেন।’ ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর থেকে রাজশাহীতে ইলিশ কমতে থাকে বলে জানান তিনি। বাঁধের কারণে পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় স্রোতও কমে যায়। ফলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ অতিক্রম করে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসা বন্ধ হয়ে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ইয়ামিন হোসাইন বলেন, পদ্মার স্বাভাবিক খরস্রোতা বা যৌবন হারিয়ে গেছে। পদ্মায় ইলিশ ফেরাতে হলে এ নদীতে খরস্রোতা বা নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ থেকে ৪.৭ কিলোমিটার একটি এলাকা পদ্মা নদী থেকে ভারতের ভিতরে চলে গেছে। ফলে বাংলাদেশের অংশে মা ইলিশ ও জাটকা ধরা বন্ধ থাকলেও ভারতের দিকে তা উন্মুক্ত থাকছে।
এজন্য রাজশাহীতে বড় ইলিশ পাওয়া যায় না। মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল ওয়াহেদ মন্ডল বলেন, ইলিশ এমন একটি মাছ যা সমুদ্র ও নদী উভয় জায়গায় বিচরণ করে। ইলিশের যৌবন প্রাপ্তির জন্য সমুদ্রে বসবাস করতে হয়, আর ডিম দেওয়ার জন্য আসতে হয় নদীতে। একসময় পদ্মায় প্রচুর ইলিশ পাওয়া গেলেও পানির গভীরতা কমে যাওয়া, যত্রতত্র ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, বাঁধ দেওয়া, পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, নদীতে ভাটির দিকে অত্যাধুনিক জাল ফেলে মাছ ধরার কারণে রাজশাহী এলাকায় ইলিশ পাওয়ার হার কমে গেছে। তবে এখন জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্প চালু ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলে ইলিশের পরিমাণ বাড়ছে।
সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদী ও সুজানগর এবং সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকায় বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে ইলিশের প্রাচুর্য বেশি। রাজশাহী বিভাগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫০৭ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৩৫ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৪১ মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৮১ মেট্রিক টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০০ মেট্রিক টন ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৯২ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে।