বিশুদ্ধ খাবার পানির নামে রাজধানী ঢাকায় জারে ভরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে লাইনের পানি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল পানির এ রমরমা ব্যবসা করছেন। বিএসটিআইর অনুমোদনহীন ঢাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে শত শত। অথচ প্রতিটি জারে ব্যবহার করা হচ্ছে বিএসটিআইর নকল স্টিকার। মগবাজার, বাংলামোটর, বনশ্রী, ভাটারা, খিলগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণায় ঢাকার ৯৭ ভাগ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু পাওয়ার তথ্য আসে। এমন ভীতিকর তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই অভিযানে নামলেও এখনো নিয়ন্ত্রণহীন এ ব্যবসা। এ বিষয়ে বিএসটিআইর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, এভাবে দূষিত পানির অবৈধ বাণিজ্য দন্ডনীয় অপরাধ। পানি বিশুদ্ধকরণের ৪০ থেকে ৪১টি প্যারামিটার রয়েছে। এসব প্যারামিটার উত্তীর্ণ হলেই পানি সরবরাহ করা যাবে, অন্যথায় যাবে না। এসব অবৈধ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানিতে লেড, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি থাকলে মানবদেহের জন্য তা মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিএসটিআইর লাইসেন্সবিহীন ড্রিংকিং ওয়াটার/ ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার পণ্য-উৎপাদন ও বাজারজাত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত। এসব অপতৎপরতা রোধকল্পে বিএসটিআই অতীতেও ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত থাকবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জারের পানি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে নগরীর প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানে জারের ফিল্টার করা প্রতি গ্লাস পানি বিক্রি হয় ১ টাকায়। জারের পানি কতটুকু নিরাপদ জানতে চাইলে দোকানদাররা বলেন, আমরা প্রতিটি জার ৩০ থেকে ৪০ টাকায় ক্রয় করি। বিভিন্ন কোম্পানি পানি নিরাপদ বলে আমাদের দোকানে দিয়ে যায়। আদৌ বিশুদ্ধ কি না তা বলতে পারব না। নগরীর কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, অবাধে চলছে দূষিত পানির রমরমা ব্যবসা। বেশির ভাগ মানুষই জারের পানি নিয়ে সংশয়ে আছেন। দোকান, রেস্টুরেন্টে দেদার বিক্রি হচ্ছে জারের পানি। বেশির ভাগ মানুষই জারের পানি পান করছেন। সন্দেহ থাকলেও কারোই স্পষ্টভাবে জানা নেই ফিল্টার করা পানি মনে করে যা পান করছেন তা নিরাপদ কি না। অথচ সরাসরি বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে এ জারের পানির বেশির ভাগই সরাসরি ওয়াসার লাইন কিংবা নিজস্ব গভীর নলকূপ থেকে নেওয়া হয়।
রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগ এলাকায় নামে-বেনামে দেখা যায় বিশুদ্ধ পানির কারখানার ভিতরে নোংরা পরিবেশে শ্রমিকরা ডিটারজেন্ট দিয়ে জার পরিষ্কার করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, তাদের কারখানায় ‘আল্ট্র্রা ভায়োলেট-রে’ দিয়ে শোধন করা প্রতি জারের পানি বিক্রি হয় ২৫ টাকায়। আর ‘রিভার্স অসমোসিস’ পদ্ধতিতে শোধন করা প্রতি জার পানির দাম ৭০ টাকা।অথচ বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সরাসরি ওয়াসা বা গভীর নলকূপের পানি জারে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ বাসায়ও এ পানি ফুটিয়ে ছাড়া কেউ পান করেন না। দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহের কারবার করে যাচ্ছেন কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। মাঝে-মধ্যে দু-একটি অভিযান চালানো হলেও পানির মান যাচাইয়ে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।