মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

বরেন্দ্র অঞ্চলে আশার আলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বরেন্দ্র অঞ্চলে আশার আলো

উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প জরুরি : বরেন্দ্র অঞ্চলে চৈত্রমাসে খালবিল, পুকুর ও নদী নালা শুকিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় পানির তীব্র সংকট। সেচ কাজের জন্য কৃষকরা নির্ভরশীল হয় গভীর নলকূপের ওপর। আর এ কারণেই আশঙ্কাজনকভাবে ভূ-গর্ভস্থ স্তরে পানি নিচে নেমে গেছে। যার কারণে মরুকরণও দেখা দিতে পারে - বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানির সংকট দীর্ঘদিনের। ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার বাড়ানোর ব্যবস্থা না থাকায় চাপ পড়েছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে মরুকরণের আশঙ্কা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিন দশকের বেশি সময় ধরে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে অঞ্চলটির মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো ১৯৬২ সালে সরকারের কাছে সুপারিশ করে। পরে ২০১৩ সালে সেটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দাখিল করা হয়। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর প্রস্তাবনাটি ফাইলবন্দি ছিল। অবশেষে রাজশাহী সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে আশার আলো দেখছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষ কারণ এটি বাস্তবায়ন হলে সেচের পানি সংকট দূর হবে। সেই সঙ্গে সম্ভাব্য মরুকরণের হাত থেকে অঞ্চলটি রক্ষা পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। জানা গেছে, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ইতোমধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি রিভাইজ করে আবারও দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক গোলাম সাব্বির সাত্তার ২০০২ সালে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার ভূমি জটিল হওয়ায় কেবল পর্যাপ্ত পানির অভাবে মাটির ভৌতিক ও রাসায়নিক গুণাবলি স্থায়ীভাবে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে থাকায় বৃক্ষ ও শস্যাদি ক্রমাগতভাবে পানি শোষণের ক্ষমতা হারাচ্ছে। তিনি সুরাপিশপত্রে এ অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা ও শস্য খেতে নিবিড় সেচ দেওয়ার লক্ষ্যে ভূউপরিস্থ পানির সংস্থানের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের অন্যতম রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় পদ্মার তীরে পাম্প স্টেশনের সাহায্যে পানি উত্তোলন করে তা নালার মাধ্যমে রাজশাহী অঞ্চলের বিস্তীর্ণ বরেন্দ্রভূমির শস্য খেতসহ গৃহস্থালির কাজে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা সম্ভব।’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের ৭৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে নিবিড় সেচ দেওয়া যাবে। পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ১৯৮৮-৮৯ পর্যন্ত দুই বছর নিবিড় সমীক্ষা পরিচালনা করে। জাইকার প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৪৩ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়। এটি বাস্তবায়নে তিন বছর সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 ২০১৩ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা হয়। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের সবুজ পাতায় ঠাঁই পায়। তবে ব্যয় বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।’ তিনি আরও জানান, প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। আবারও এর বাস্তবায়ন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে।

প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখলে অঞ্চলটিতে শস্য উৎপাদন বাড়াতে পাউবোর প্রকৌশলী রিফাত বলেন, ‘দেশি-বিদেশি সব সমীক্ষায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অতিরিক্ত ১৫ কোটি টাকা অর্থমূল্যের আড়াই লাখ টন ধানসহ বিভিন্ন ধরনের শস্য উৎপাদন হবে বলে আশা করা হয়েছে। ভূ-উপরিস্থ পানি সুলভ ও সহজ মূল্যে পেলে প্রকল্প এলাকার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ উপকৃত হবে বলে জাইকার সমীক্ষায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর