নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পাশাপাশি এই রোগে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে পা। সৃষ্টি হতে পারে পায়ের স্থায়ী ক্ষত। হতে পারে ফুট আলসার। অনেক সময় কেটে ফেলতে হয় রোগীর পা। সচেতনতা ও সময়মতো সমন্বিত চিকিৎসা বাঁচাতে পারে এমন অঙ্গহানি থেকে। একজন পোডিয়াট্রিস্ট দিতে পারেন এ ব্যাপারে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুচিকিৎসা। ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের সমস্যার সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে ও দেশব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গতকাল থেকে যাত্রা শুরু করেছে পোডিয়াট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক পোডিয়াট্রি দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল রাজধানীর সোবহানবাগের ড্যাফোডিল প্লাজায় আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অর্থোপেডিক সার্জন ও নিটোরের সাবেক পরিচালক প্রফেসর শেখ নুরুল আমিনকে কনভেনর, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ভাস্কুলার সার্জন প্রফেসর জি এম মকবুল হোসেনকে প্রো-কনভেনর এবং বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পোডিয়াট্রিস্ট ও প্লাস্টিক সার্জন ডা. মোরশেদ উদ্দিন আকন্দকে মেম্বার সেক্রেটারি করে পোডিয়াট্রি অ্যাসোসিয়েশনের কনভেনর কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে ডা. মোরশেদ উদ্দিন আকন্দ বলেন, কনভেনর কমিটি শিগগিরই একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করবে। এই অ্যাসোসিয়েশন এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সহযোগিতায় সচেতনতামূলক কর্মসূচিগুলো উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে কাজ করবে। তিনি অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডা. চৌধুরী রাশেদুল মুঘনি। পোডিয়াট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের এ আয়োজনে সহযোগী হিসেবে ছিল একাগ্রা ও রেনেটা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রফেসর শেখ নুরুল আমিন বলেন, ডায়াবেটিক রোগীদের পা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাদের কিডনি, হার্ট, চোখ, লিভার, স্নায়ুতন্ত্রসহ নানা অঙ্গের চিকিৎসা করাতে হয়। তারা চিকিৎসা করেন, কিন্তু পায়ের যত্নটা সেভাবে হয় না। অযত্ন ও অসচেতনতায় অনেককে পা হারাতে হয়। এসব রোগীর যাতে অপারেশন না লাগে সেদিকে আমাদের মনোযোগ থাকবে। অনেকে ডায়াবেটিক হলে প্রকাশ করতে চান না। হারবাল ওষুধ খান। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার একটা গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। পোডিয়াট্রিস্ট তৈরি করতে বিদেশের মতো কোর্স চালু করতে হবে। এগুলো এগিয়ে নিতে পোডিয়াট্রি অ্যাসোসিয়েশন কাজ করবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ভাস্কুলার সার্জন প্রফেসর জি এম মকবুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান, বারডেম হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ফিরোজ আমিন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ডায়াবেটিসকে বলা হয় সব রোগের মা। অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের জটিলতাও বড় সমস্যা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের ২৭ ভাগ পায়ের সমস্যায় ভুগছেন। ১১ ভাগের ফুট আলসার আছে। সচেতনতার মাধ্যমে ফুট আলসার প্রতিরোধ সম্ভব। অনেক সময় পায়ের নখে সমস্যা হলে রোগীরা খুঁচিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন, ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খান। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত ৬০ ভাগ সমস্যা প্রতিরোধ সম্ভব। তার পরও যদি ফুট আলসার হয়ে যায়, দেরি না করে পোডিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন মুখ দেখার মতো আয়না দিয়ে পা দেখতে হবে। পা পরিষ্কার ও শুকনা রাখতে হবে।