আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও বঞ্চিত ছিলেন তারা। উপেক্ষিত থাকতেন কমিটিতেও। রাজপথে দলের জন্য ঘাম ঝরালেও কমিটিতে বড় পদ বাগিয়ে নিতেন প্রভাবশালী নেতা ও তাদের আশীর্বাদপুষ্টরা। দলের এই দুঃসময়ে সিলেট আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এসব প্রভাবশালী বড় নেতা পালিয়েছেন দেশের বাইরে। অনেকে বিদেশে থাকা পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন নিরাপদে। কিন্তু কঠিন এই সময়ে বিপদে পড়েছেন দলের সেই উপেক্ষিত ‘ছোটরা’। দেশ ছাড়ার সুযোগ ও সামর্থ্য না থাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই এসব ছোট নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ধরা পড়ছেন আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। সিলেটের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দলীয় প্রভাব ও ক্ষমতা ছিল গুটিকয়েক নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠজনের কাছে। সরকারদলীয় নেতা হিসেবে আখের গুছিয়েছেন তারা। দলের হাইব্রিডরা দাপট দেখিয়েছেন ত্যাগী ও বঞ্চিতদের ওপর। ত্যাগী কর্মীরা সবসময় থেকেছেন উপেক্ষিত। দলের মধ্যে ‘বিরোধী দলের’ নেতা-কর্মী হিসেবে থাকতে হয়েছে তাদের। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়ন ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিলেটের প্রভাবশালী বড় নেতারা নিরাপদে দেশ ছাড়েন। এদের মধ্যে অনেকে বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় পালিয়েছেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। বেশির ভাগ নেতা প্রথমে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ও পরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। এসব বড় নেতার অনেকের পরিবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় তারা সেখানে নিরাপদে রয়েছেন। এখনো ভারতে অবস্থান করা শতাধিক নেতাদের কেউ কেউ ভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।
এদিকে ছোট নেতারা দেশ ছাড়ার সুযোগ ও সামর্থ্য না থাকায় তারা সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন। কিন্তু গাঢাকা দিয়েও তারা নিরাপদে নেই। আত্মগোপনে থাকার দুই মাসের অধিক সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় নানা কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে পরিবার ও পরিচিতজনদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের অবস্থান শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করছে। চলতি মাসের ১১ দিনে সিলেটে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই ধরা পড়েছেন র্যাবের হাতে। গ্রেপ্তার নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- মহানগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদ শেখ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি আজিজুল হাকিম রাজু, বালুচর আবাসিক এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার আবদুল্লাহ, কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মীর আবদুল্লাহ, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক এম নিজাম উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মাসুক, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এইচ ইলিয়াছি দিনার ও যুবলীগ নেতা রেদওয়ান আহমদ বাপ্পী। সিলেট মহানগরীর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকলেও আমাদের মতো তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। দলের বড় পদবিধারী ও তাদের ঘনিষ্ঠজনরা আখের গুছিয়েছেন। ১৫ বছর রাজপথের সব কর্মসূচিতে থাকলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। চিকিৎসার জন্য আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে হাত পাততে হয়েছে। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে টাকা কামিয়েছেন, সম্পদ করেছেন তারা এখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আর আমাদের মতো ছোট নেতা-কর্মীরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।’