দীর্ঘদিন ধরেই আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি বছর উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু মালিকদের স্লিপ কারসাজিতে হিমাগারে বীজ আলু রাখতে পারছেন না কৃষকরা। তাতে আগামী বছর বীজ আলুর তিন গুণ খরচ পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ৬ টাকা ৭৫ পয়সা খরচ অনুযায়ী আলু বীজ লাগানোর সময়সাপেক্ষে প্রতি কেজি আলুর দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু কৃষক বীজ আলু হিমায়িত করতে না পারায় তা অন্তত তিন গুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাব ফেলবে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক অধ্যাপক ড. তুহিন শুভ্র রয় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার কোল্ড স্টোরেজ সিন্ডিকেট দমন করতে না পারলে আগামী বছর আলু বীজের ৬৫ শতাংশ খরচ বাড়বে। যা সরাসরি ভোক্তা ও কৃষকের ওপর প্রভাব পড়বে। এর জন্য সেপ্টেম্বর-আক্টোবরের দিকে বিএডিসি দাম নির্ধারণ ও বাজার তদারকি করলে অতিরিক্ত খরচ থেকে বাঁচবে কৃষক। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী দেশের মোট কোল্ড স্টোরেজ সংখ্যা ৪০০টি। এর মধ্যে সক্রিয় ৩৭০ থেকে ৩৮০টির মতো। এসব কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টন। তবে কৃষক ধারণ ক্ষমতার মাত্র ৩ শতাংশ আলু সংরক্ষণ করতে পেরেছে বলে জানা যায়।
গত ১০ বছর থেকে চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকার আলু চাষি সেকান্দার আলী বলেন, আবাদের জন্য এক বিঘা জমিতে ৫ মণ আলু বীজের দরকার হয়। গত বছর তার সংরক্ষণের বাইরে কিছু আলুর টান পড়লে কেজিপ্রতি ১২০ টাকায় বীজ আলু কিনতে হয়েছে। তাতে খরচ বেড়ে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনের খরচ পড়েছে ২০-২১ টাকা। চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদন ভালো হলেও কাঙ্ক্ষিত বীজ আলু হিমায়িত করতে পারেননি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ৫০ মণ আলু বীজ সংরক্ষণের জন্য গেলেও মাত্র তিন মণ আলু রাখতে পেরেছি। বাকি আলু কিনতে অন্তত কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। চাহিদার পুরো আলু হিমায়িত করতে পারলে কেজিপ্রতি খরচ হতো ৬০-৬৫ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে দেশে প্রায় ৯০ লাখ টন আলুর চাহিদা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ২০ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন হয়েছে। এসব আলু উৎপাদনের জন্য প্রায় ৮ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টন বীজ আলুর প্রয়োজন। এবারে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ২০-২২ টাকা। খোদ সরকারি হিসেবেই ১৯ টাকা ৮০ পয়সা উৎপাদন খরচের তথ্য উঠে এসেছে। তবে কৃষক স্লিপ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে কেজিপ্রতি আলুর দাম পাচ্ছেন ১০ থেকে ১৪ টাকা। একই আলু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। আবার বাজার ব্যবধানে এসব আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৭ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন আলু চাষিরা। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান ম ল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আলু বীজ সংরক্ষণের একমাত্র মাধ্যম কোল্ড স্টোরেজ। যেহেতু এবারে টার্গেটের চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। তাই গত বছরের মতো এবার বীজ আলু সংরক্ষিত করবেন কৃষক। যদি কোথাও সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে আমাদের কর্মকর্তারা বীজ আলু সংরক্ষণে কৃষকদের সাহায্য করবেন।