ওষুধ তৈরিতে ৪০০ সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান (এপিআই) প্রয়োজন হয়। দেশে মাত্র ২১টি কোম্পানি ওষুধ তৈরির জন্য ৪১ ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান (এপিআই) উৎপাদন করে। তাই ওষুধ তৈরি করতে কোম্পানিগুলোকে ৮০ শতাংশ এপিআই আমদানি করতে হয়। এপিআই আমদানিনির্ভর হওয়ায় দেশে ওষুধের দাম কমানো এবং রপ্তানির বাজার ধরা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে ওষুধ শিল্প সমিতি। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডেল্টা ফার্মার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. মো. জাকির হোসেন, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সিইও মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান, এসিআই হেলথকেয়ারের সিইও এম মহিবুজ্জামান, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, দেশে ছোটবড় মিলিয়ে বর্তমানে ৩০৭টি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশে রপ্তানি হয় দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ওষুধ। গত বছর ওষুধের বাজার ছিল ২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। আগামী পাঁচ বছরে এ বাজারের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।
ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো দেশের মানুষের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা পূরণ করে। এপিআই উৎপাদন না হওয়ায় বিদেশের মার্কেটে অন্য দেশের কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রিসার্ভ ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের কোম্পানিগুলো ওষুধ উৎপাদন করে। মৌলিক গবেষণা করে ওষুধ উদ্ভাবন করে উৎপাদন করার মতো আর্থিক সক্ষমতা এ দেশের কোম্পানিগুলোর নেই। এজন্য বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। তবে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প এগিয়ে নিতে দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে। তারা কিন্তু বিদেশি এসব প্রতিষ্ঠানে ওষুধ উৎপাদনে কাজ করছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। এসিআই হেলথকেয়ারের সিইও এম মহিবুজ্জামান বলেন, এলডিসির কারণে আমাদের ওষুধ শিল্পে বেশ কিছু বিষয় মওকুফ করা হয়েছে। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছালে এ ছাড়গুলো আর থাকবে না। তখন মূল (মাদার) কোম্পানি থেকে তাদের চাহিদামতো দামে এপিআই কিনতে হবে। এর প্রভাব পড়বে ওষুধের বাজারে, বেড়ে যাবে ওষুধের দাম। তাই আমদানিনির্ভরতা কমাতে দেশে এপিআই উৎপাদনে নজর দিতে হবে। দেশের বাজারে বিদ্যমান ওষুধ এবং রপ্তানি করা ওষুধের গুণগত মান একই। ডেল্টা ফার্মার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, ওষুধ শিল্প দেশের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধ শিল্প পার্কে ৪২ প্লট ২৭ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানি সেখানে উৎপাদনে যাবে বাকিরা হয়তো এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একীভূত (মার্জ) হবে। এপিআই উৎপাদনে যেতে চারটি সংস্থার অনুমোদন লাগে। এগুলোকে ওয়ানস্টপ সার্ভিস করার জন্য বারবার আমরা বলেছি। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।