বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলাটি যমুনা নদী দিয়ে ঘেরা। দেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ এই নদীই এলাকার মানুষের জন্য কখনো সুখের কখনো দুঃখের সঙ্গী হয়ে থাকে। তবে হিসাব কষে দেখলে প্রায় দুই মাস বন্যায় দুর্ভোগের পর থেকে বাকি ১০ মাস এলাকাবাসীর উপকারেই লেগে থাকে। ধান কাটা, ফসল ফলানো, বর্ষায় মাছ আহরণ করে নদীবাসী দিন পার করে। এর সঙ্গে নদীশাসন করতে গিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণবাঁধ, ফিসপাস, স্পার, গ্রোয়েনগুলো নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকৃত বিভিন্ন বাঁধই এখন পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। নদীকেন্দ্রিক বিনোদন উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত পরিবার যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভিড় করছে। এর মধ্যে একটি ঘাটের নাম ‘প্রেম যমুনা’ ঘাট। এই ঘাটে পর্যটকদের ভিড় বছরজুড়ে লেগেই থাকছে। জীববৈচিত্র্যের নানা উপাদান আর খেলা নিয়ে মত্ত থাকা যমুনা নদীর বিভিন্ন স্পটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় এই প্রেম যমুনা ঘাটে। চারপাশে যমুনা নদীর পানি আর একদিকে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা চর। তবে শুধু প্রেম যমুনাই নয়, এর সঙ্গে কালীতলা গ্রোয়েন বাঁধে, দেবডাঙ্গা ঘাটে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে, হাসনাপাড়া হার্ডপয়েন্ট, দিঘলকান্দি, কুতুবপুর, শিমুলতলা ফিসপাস, নিজবলাইল ঘাট ও স্পারগুলো খুব দৃষ্টিনন্দন। এর সঙ্গে অর্ধশত চরের মধ্যে ধারাবর্ষা, শনপোচা, নাটুয়ারচর, ডাকাতমারা চরগুলো প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরে থাকায় দেশের নানা প্রান্তের মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনভর সময় পার করছেন। বিশেষ করে এসব দৃশ্য দেখতে বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার অনেক ভ্রমণ পিপাসু ভিড় করছেন প্রতিদিন। এই নদীর পাড়ে বসে বা দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেন. সুর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য, আবার সেই সময়েই মাথার ওপর দিয়ে নীড়ে ফিরছে নানা রকমের পাক-পাখালির ঝাঁক। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন এলাকার মানুষ ও বেকার যুবকরা।
তবে স্থানীয়রা জানান, বগুড়ায় বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর প্রেম যমুনা ঘাট হতে পারে রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত। সরকারিভাবে সংস্কার করে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে দিলেই প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব। কারণ পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকার পরও হাজারো মানুষের প্রতিদিন ভিড় হয় এখানে। তাই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ এলাকার মানুষের।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার জানান, বিনোদনকেন্দ্রে আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। পাশাপাশি কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকেও নজরদারি রয়েছে।