৩ নভেম্বর, ২০২১ ১৬:৩৯

উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বীমায় এনেছে নতুন জোয়ার

অনলাইন ডেস্ক

উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বীমায় এনেছে নতুন জোয়ার

ব্যবিলনীয় সভ্যতায় ব্যবসার কাজে দূরের পথ পাড়ি দেওয়ার সময় প্রায়ই ডাকাতদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হতো ব্যবসায়ীরা। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবিলনীয় রাজা হাম্মুরাবি, একটি প্রথা চালু করেন। যা ‘হাম্মুরাবি আইন’ নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই প্রথায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সহায়তায় এগিয়ে আসতেন শহরের সব মানুষ। হাম্মুরাবির একতা থেকে শুরু হয় রিস্ক কমিউনিটির। পরবর্তীতে এখান থেকেই বীমার যাত্রা শুরু। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বীমা খাতে প্রভূত উন্নয়ন ঘটাতে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বীমা সুরক্ষার আওতায় থাকবে। এই স্বপ্নকে পুঁজি করে, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীমা খাতের উন্নতির লক্ষ্যে নানাবিধ নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে ধারণ করে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বীমার খরচ কমিয়ে বীমা সেবাকে দ্রুত করার লক্ষ্যে কয়েকটি স্বনামধন্য বীমা প্রতিষ্ঠানের কাস্টমাইজড পলিসি নিয়ে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে কার্নিভাল অ্যাসিউর। 

একবিংশ শতাব্দীতে এসে বীমা নিয়ে এখনো আমাদের মধ্যে বেশ দ্বিধা কাজ করে। অথচ উন্নত এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে বীমা থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত সুবিধা নিচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, চিরাচরিত বীমা পলিসিগুলো মানুষকে আর আকৃষ্ট করছে না। যুগের সাথে সাথে বীমা থেকে মানুষের চাওয়াও বদলে গিয়েছে। 

গতানুগতিক বীমা সেবা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কিছু করার চিন্তায় শুরু থেকেই কার্নিভাল অ্যাসিউর সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে। বীমা পার্টনারদের সাথে মিলে তারা স্বল্প খরচের বিভিন্ন কাস্টমাইজড বীমা পলিসি তৈরি করে, অনলাইন ও অফলাইন উভয় পদ্ধতিতেই মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিচ্ছে, যা বাংলাদেশের বীমা সেবা খাতে একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ। পুরো বীমা সেবা – যেমন বীমা ক্রয়, অ্যাকটিভেশন এবং ক্লেইম সেটেলমেন্ট, কার্নিভাল অ্যাসিউর নিশ্চিত করে অনলাইনেই। বাংলাদেশের বীমা সেবা খাতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহার মূলত তারাই শুরু করে।        

কার্নিভাল অ্যাসিউর এর মাধ্যমে বীমা করেছেন চাকরিজীবী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি জানান, ‘ফেসবুক পেজ থেকে কার্নিভাল অ্যাসিউর এর বিষয়ে জানতে পারি। ওদের ওয়েবসাইটে সুন্দর করে অনেকগুলো পলিসি দেওয়া আছে। সেখান থেকে আমার পরিবারের জন্য একটি পলিসি নিয়েছিলাম। এই বছরের শুরুর দিকে আমাকে কার্নিভাল অ্যাসিউর থেকে রিমাইন্ডার কল করে। বীমা করেছিলাম মনেই ছিল না। জানতে চেয়েছিলাম, হাসপাতালে থাকার কারণে বীমা ক্লেইম করতে পারব কিনা। তারা বলল, আমি অবশ্যই ক্লেইম করতে পারবো। পরে ওয়েবসাইটে ক্লেইম করার এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরো টাকা পেয়ে যাই।’

কার্নিভাল অ্যাসিউর ডটলাইনস গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। ডটলাইনসের ডিরেক্টর এবং কার্নিভাল অ্যাসিউরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রাস্তি মোরশেদ বলেন, ‘মানুষের লাইফস্টাইলে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। লাইফস্টাইল পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের ঝুঁকির ধরণে পরিবর্তন এসেছে। কমবয়সী থেকে মধ্যবয়সী সকলেই এখন বহির্মুখী এবং প্রযুক্তিনির্ভর। মানুষের প্রযুক্তি নির্ভরতার চাহিদা পূরণ করতেই আমরা বীমা পার্টনারদের সহযোগিতায় অনেক নতুন প্রোডাক্ট বিশেষ করে টার্ম হেলথ পলিসি মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। বাৎসরিক ৩৬৫ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন হেলথ পলিসি থেকে মানুষ নিজের এবং পরিবারের জন্য পলিসি বেছে নিতে পারবেন। পার্টনারদের সঙ্গে একত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা বীমাকে করেছি সহজ, স্বচ্ছ এবং দ্রুত। আমাদের মূল লক্ষ্য গ্রাহকের সন্তুষ্টি, তাই আমরা ও আমাদের বীমা পার্টনাররা ক্লেইম সেটেলমেন্টকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেই।’ 

ক্লেইমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে কার্নিভাল অ্যাসিউর জানায়, যেহেতু প্রিমিয়াম অনেক কম, তাই বীমা করার পর অনেকেই ভুলে যান যে, তিনি কিংবা তার পরিবার বীমা কভারেজের আওতায় আছেন। ক্লেইম অ্যাপলিকেশন নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট সময় পরপর, কার্নিভাল অ্যাসিউর থেকেই ক্লেইম রিমাইন্ডার কল বা এসএমএস দেওয়া হয়। ওয়েবসাইট থেকে কোনো কাগজ ছাড়াই মাত্র কয়েক মিনিটে বীমা ক্লেইম করা যায় এবং কয়েক দিনের মধ্যেই ক্লেইমের টাকাও বীমাগ্রহীতার ব্যাংক একাউন্ট বা মোবাইল ওয়ালেটে পৌঁছে যায়। 

বাংলাদেশে কার্নিভাল অ্যাসিউরই প্রথম কনজ্যুমার প্রোডাক্টের সাথে বীমা বান্ডেল এর বিষয়ে চিন্তা করে। যার সূচনা হয় স্কয়ার টয়লেট্রিজের সুপারমম ডায়াপারের প্রতিটি প্যাকেটের সাথে ২০,০০০ টাকার একটি ফ্রি পলিসি বান্ডেল করে। পলিসি এক্টিভেশন করলেই বাচ্চা এবং মা-বাবা বীমা কভারেজের আওতায় থাকবেন ১ মাস। নতুন এই চিন্তা, মার্কেটে দারুণ সাড়া ফেলে এবং কাস্টমারের বিশ্বস্ততা অর্জনের মাধ্যমে প্রোডাক্টটির জনপ্রিয়তা বাড়ায়। এছাড়াও ডিপোজিটের সাথে হেলথ কভারেজ, কিস্তি ভিত্তিতে বীমাতে টাকা সঞ্চয়, ইন্টারনেট প্যাকেজের সাথে বান্ডেলের মতো দারুণ বীমা সেবা তারাই প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে বীমা সেবাকে পৌঁছে দিতে কার্নিভাল অ্যাসিউর বেশ কয়েকটি জেলায় কাজ করেছে UNCDF এর সাথে। এছাড়াও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশজুড়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে কার্নিভাল অ্যাসিউরই প্রথম ফিন্যান্সিয়াল ও ব্যাংকিং অ্যাপে, বাড়ির পাশের রিটেইল দোকান এবং এজেন্ট ব্যাংকিং এর আউটলেটে বীমাকে সহজলভ্য করেছে। 

কার্নিভাল অ্যাসিউরের এই যাত্রায় বড় অবদান আছে বীমা পার্টনারদের। নতুন নতুন পলিসি তৈরির বিষয়ে কার্নিভাল অ্যাসিউর পার্টনারদের উৎসাহিত করছে যাতে পার্টনাররাও দারুণ সাড়া দিচ্ছেন। যত দ্রুত সম্ভব ক্লেইম সেটেলমেন্ট সম্ভব হচ্ছে পার্টনারদের সহযোগিতার কারণেই। বর্তমানে ৬টি স্বনামধন্য বীমা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে কার্নিভাল অ্যাসিউরের সাথে - চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। 
উন্নত বিশ্বে বীমা দারুণ ও সফলভাবে মানুষকে সেবা দিয়ে গেলেও, আমাদের দেশে এখনো বীমা নিয়ে মানুষের আস্থা তৈরি হয়ে ওঠেনি। প্রযুক্তির সাহায্যে কার্নিভাল অ্যাসিউরের উদ্ভাবনী সব উদ্যোগ এই আস্থা তৈরিতে অবদান রাখছে এবং সর্বোপরি বীমা খাতকে এগিয়ে নিচ্ছে। গত তিন বছরে কার্নিভাল অ্যাসিউর তার বীমা পলিসিগুলোতে মানুষের দারুণ সাড়া পেয়েছে। যা তাদের আরো নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে ভালো সেবা দিতে প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করছে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন/ শ্রা-সা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর