শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩ ০০:০০ টা

মহাসেন : আশ্রয় কেন্দ্রে লাখো মানুষের দুর্ভোগ

টেকনাফ উখিয়ায় আতঙ্কে উপকূলবাসী

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তাণ্ডবলীলা কেটে গেলেও চট্টগ্রাম ও কঙ্বাজার টেকনাফ উপকূলবাসীর আতঙ্ক কাটেনি। চট্টগ্রামে লাখো মানুষ রয়ে গেছে আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেক জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্রে নানা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন মানুষ। এ ছাড়া টেকনাফের প্রায় দুই লাখ মানুষ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে। উখিয়ার শত শত পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া নিরাপদ মনে না করে বাড়ি-ঘরে ঝুঁকি নিয়ে অবস্থান করছেন। প্রতিনিধিদের খবর- চট্টগ্রাম : জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মহাসেন থেকে রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৪টি উপজেলার মধ্যে ছয়টি অধিক ঝুঁকিতে ওইসব এলাকার লোকজনই বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে আনোয়ারায় এক লাখ, বাঁশখালী থেকে ৭০ হাজার, সন্দ্বীপে ৫০ হাজার, সীতাকুণ্ড থেকে সাত হাজার, মীরসরাইর দুই হাজার ও পটিয়া থেকে এক হাজার লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া বন্দরনগরীর উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারীদের সিটি করপোরেশনের ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়। তাদের অধিকাংশ মহাসেনের প্রভাব কেটে গেলেও রয়ে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। মহাসেন দুর্বল হলেও চট্টগ্রামবাসী এখনো রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। টেকনাফ : গতকাল সকাল ৯টার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও নিম্নাঞ্চলের মানুষ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এসব এলাকার লোকজন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। মহাসেন আতঙ্ক কাটলেও শাহপরীরদ্বীপের ৪০ হাজার জনগোষ্ঠীর মাঝে রয়েছে উৎকণ্ঠা। ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কার না তাদের দুশ্চিন্তা আরও বেশি। কেননা সামন্য ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হলেই তাদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। উখিয়া (কঙ্বাজার) : উখিয়ার ৮টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র থাকলেও সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ আশ্রয়ণ কেন্দ্র ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে উপকূলজুড়ে মহাসেন আতঙ্ক বিরাজ করলেও সেখানে বসবাসরত পরিবার ওই সব আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া নিরাপদ মনে না করে বাড়ি-ঘরে ঝুঁকি নিয়ে অবস্থান করছে। মহাসেনের প্রভাব কেটে গেলেও এসব এলাকার মানুষের আতঙ্ক কাটেনি। সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' দুর্বল হয়ে যাওয়ার খবরে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ গত দুই দিন আগে বাড়িঘর ছেড়ে নিকটবর্তী সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার পর গতকাল 'মহাসেন' মংলা অতিক্রম করেছে শোনায় বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানায়, ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার আগে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে যায়নি। যে কারণে সাতক্ষীরায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। 'মহাসেন' নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতার কারণে মানুষ আগ্রহী হয়ে সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বাগেরহাট : বুধবার সন্ধ্যা থেকেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বাগেরহাটে ২০১টি সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ২ লাখ মানুষের অধিকাংশ বাড়ি ঘরে ফিরে গেছে। গতকাল দুপুর থেকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করে। এদিকে প্রবল বর্ষণ ও দমকা হাওয়ার কারণে উপকূলের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মংলা উপজেলায় কাঁচা ঘর-বাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে ২২টি চিংড়ি ঘের এবং ১ হাজার ২০০টি পুকুরের কোটি মাছ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার।

সর্বশেষ খবর