শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ বিএনপিতে কোন্দল, সংকটে জাপা

আওয়ামী লীগ বিএনপিতে কোন্দল, সংকটে জাপা

নড়াইলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা চার ধারায় বিভক্ত। নড়াইল সদরের গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন্দল আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সদরে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের অন্যতম কারণও কোন্দল। আওয়ামী লীগের নতুন কোন্দলের ইতিহাস নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু। ওই নির্বাচনে নড়াইল ১ আসনে মহাজোট থেকে দলীয় মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাড. সুবাস চন্দ্র বোস। অপরদিকে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন কবিরুল হক মুক্তি। এ সময় মনোনয়ন পরিবর্তন করে মহাজোট প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বিমল বিশ্বাসকে মহাজোটের প্রার্থী করা হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রশ্ন তোলেন '৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিমল বিশ্বাস আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ অস্ত্র কেড়ে নিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করেছেন। এসব রাগ অভিমান সত্ত্বেও নৌকা প্রতীক নিয়ে অনেকে কাজ করেন। কিন্তু জয়লাভ করেন কবিরুল হক মুক্তি। পরাজিত প্রার্থী বিমল বিশ্বাস তার দলীয় ও জোটের কর্মীদের বিপদে ফেলে ঢাকায় চলে যান। এরপর থেকে এমপি কবিরুল হক মুক্তি এককভাবে কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শামিমুল ইসলাম ওসিখাঁকে নিয়ে নড়াইল জেলায় একচ্ছত্রভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ফ্রেব্রুয়ারি-০২ থেকে মে-০২ মাস পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি জেলা বিএনপি পালন করেনি। একদিকে পুলিশ তাদের মিছিল-মিটিং করতে দেয় না। তারপরও মিছিল মিটিং হলে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের ছাড়া অন্য নেতাদের দেখা যায়নি। অপর দিকে জেলা সভাপতি নড়াইল কালিয়া আসনের পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর বিশ্বাস ঢাকায় থাকেন। নির্বাচন-পরবর্তী নেতা কর্মীদের দুর্দিনে খোঁজখবর নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রুপিং রাজনীতির শিকার সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ খসরুজ্জামান হালে পানি না পেয়ে দলীয় মিটিং মিছিলে খুব একটা না আসলে তৃণমূলে তার বিচরণ ও যথেষ্ট কর্মী-সমর্থক ভক্ত রয়েছে। অপরদিকে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাদের সিকদার দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে দলীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে।

জামায়াত জেলার তৃতীয় শক্তি হলেও বর্তমান অবস্থ্থা নাজুক। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বিচারে আন্দোলনের কারণে অধিকাংশ জেলার নেতা-কর্মী এখন জেলহাজতে। তা ছাড়া জামায়াতে ইসলামী মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর তাদের দলীয় কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও পুলিশের হয়রানির কারণে ১৯-দলীয় জোটের শরিক বড় দল বিএনপি কোনো ভূমিকা না রাখায় জেলায় জোটের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে তেমন দেখা যায় না। তারপরও তারা গোপনে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি এ জেলায় ৪র্থ শক্তি হলেও বতর্মান অস্তিত্ব সংকটে। বর্তমান সভাপতি এলাকায় না থাকায় সাধারণ সম্পাদকের একক সিদ্ধান্তে চলছে দলের নেতা-কর্মীরা। তা ছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীরা বিপদে-আপদে তার কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পায় না বলে অভিযোগ দলের সিনিয়র ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। জাতীয় পার্টি এখন সরকারি শরিক দল না বিরোধী দল তা নিয়ে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে রয়েছে হতাশা। দলের কোনো নিজস্ব দফতর নেই। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল নাম সর্বস্ব। ওয়াকার্স পার্টি নানান অনিয়মসহ কৃষক ও এলাকার সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দশম সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে জোটের শরিক দল হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান মনোনয়ন পান এবং জয়লাভ করেন। আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি হওয়ায় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দলের আরেকটি কারণ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সুবাস চন্দ্র বোস ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোহাম্মদ আলী দলের মধ্যে কোন্দলের কথা অস্বীকার করে বলেন, নড়াইলে আওয়ামী লীগের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। অপরদিকে বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, ব্যবসার কাজে ঢাকায় থাকলেও আমি নড়াইলে এসে নিয়মিত মিছিল- মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করি।

 

সর্বশেষ খবর