শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাতক্ষীরায় নদীর অস্তিত্ব সংকট : বাড়ছে দুর্যোগ

সাতক্ষীরায় নদীর অস্তিত্ব সংকট : বাড়ছে দুর্যোগ

এক সময়ের স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষ নদ আজ স্রোতহীন মরা খাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মানবসৃষ্ট বিভিন্ন অব্যবস্থাপনাসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সাতক্ষীরার নদীগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা, কমছে ফসল উৎপাদন। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২৭টি নদী রয়েছে। পানি না থাকায় এসবের তীরে গড়ে উঠেছে জনবসতি। কপোতাক্ষ নদের গোড়া চৌগাছার তাহিরপুর থেকে পাইকগাছার শিববাড়ী পর্যন্ত ১৭৫ কিলোমিটার নদী এলাকা প্রবাহহীন হয়ে পড়ায় প্রতি বছরই এর তীরে দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগে ২১৬টি স্লুইস গেট রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি সম্পূর্ণ অকেজো, ৫০টির তলদেশ পলি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় এগুলো পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সুন্দরবনের নদ-নদী আড়পাঙ্গাশিয়া, মাদার, মালঞ্চ ও চূনার মধ্যখানেও জেগে উঠছে বড় বড় চর। এরই কাছে যমুনা নদী মারা গেছে তিন দশক আগে। কাকশিয়ালী নদীর নাব্যও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বেতনা নদী নাব্য হারিয়ে এখন পুরোপুরি মৃত খালে রূপ নিয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বছরে প্রায় আট মাস স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এ জনপদে কৃষকের ফসল ফলানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর উজান থেকে নেমে আসা ঢল অথবা বড় ধরনের  বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, নদ-নদী ও সংযোগ খালগুলো ভরাট হওয়ার কারণে সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক হেক্টর জমি বর্ষা মৌসুমে জলমগ্ন থাকছে। কয়েকশ’ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ জানান, ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের কারণে দক্ষিণের সাগর থেকে আসা উজানের পানি পলি নিয়ে আর ফিরে যেতে পারছে না। এ কারণে নদীগুলো পলিযুক্ত হয়ে পড়েছে। তলদেশ উঁচু হয়ে পড়ায় এগুলো পানিপ্রবাহ হারিয়েছে। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজ বলেন, নদী মরলে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর কারণ ফারাক্কা বাঁধ এবং ৬০-এর দশকে নির্মিত অপরিকল্পিত বাঁধ ও স্লুইস গেট। নদীর জমি দখল করে পাকা ইমারত, বসতবাড়ি, ইটভাটা নির্মাণসহ চিংড়ি চাষের জন্য ছোট-বড় বাঁধ দিয়ে বছরে দুবার স্বাদু ও নোনা পানি আনা-নেওয়া করা এবং বৃক্ষহীনতাও এ অবস্থার জন্য দায়ী।

সর্বশেষ খবর