বুধবার, ১৭ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

মামলায় কাবু বগুড়া বিএনপি

মামলায় কাবু বগুড়া বিএনপি

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় সবসময় শক্তিশালী হয়ে থাকলেও ওয়ান ইলাভেনের পর থেকে বগুড়ায় বিএনপির ভালো দিন যাচ্ছে না। কিছুটা হলেও ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে সাংগঠনিক শক্তি। মামলায় মামলায় জর্জরিত বগুড়ার বিএনপি আদালতে হাজিরা আর জামিন নিতেই অধিকাংশ সময় চলে যাচ্ছে। মামলার কারণে দলীয় কার্যালয়ে শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি যেমন কমে গেছে তেমনি স্থবিরতা নেমে এসেছে সাংগঠনিক কাজে।

জানা গেছে, ওয়ান এলেভেনের পর আওয়ামী লীগ সরকার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মী জেল ও মামলার আসামী হন। আন্দোলনের অর্থের যোগানও কমে আসে। স্থবিরতা আসতে থাকে জেলা বিএনপিতে। সেই ধকল আর কেটে উঠতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবীতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে অবরোধ হরতালের ডাক দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ আন্দোলন কর্মসূচিতে বগুড়া জেলায় বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় বিএনপি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৩টি মামলা হয়েছে। মামলায় প্রায় ২ শতাধিক এজাহারভুক্ত আসামী রয়েছে। যাদের অধিকাংশই জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এদের সঙ্গে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীও রয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এদের মধ্যে এখনো অনেকেই কারাগারে আটক।

পুলিশ জানায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল, অবরোধ চলাকালে বগুড়া জেলায় ৬৭টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ৫ ব্যক্তি নিহত ও ২৪ জন আহত হয়। এসব ঘটনায় ৭৩টি মামলা দায়ের হয়েছে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের বির’দ্ধে। এর মধ্যে বগুড়া সদরে ৩৩টি, শাজাহানপুরে ১০, শেরপুরে ১০, শিবগঞ্জে ৬, নন্দীগ্রামে ৪, দুপচাঁচিয়ায় ৫, কাহালুতে ১, ধুনটে ১ এবং সোনাতলায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার কারণে দলীয় কার্যালয়ে শীর্ষ নেতাসহ দলের কর্মীদের উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। সম্প্রতি দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত্ বার্ষিকী বগুড়ায় পালিত হয়েছে ঢিলেঢালাভাবে। এতে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি। জেলা স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতি মেহেদী হাসান হিমু, শহর যুবদল সভাপতি মাসুদ রানা মাসুদ, তারেক রহমান পরিষদের সদস্য সচিব মাহিদুল ইসলাম গফুরসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন।

অপরদিকে, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, বগুড়া জেলা যুবদল সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার, সাধারণ সম্পাদক আরাফাতুর রহমান আপেল, ছাত্রদল সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মামলার আসামী হয়ে গ্রেফতার এড়াতে জনসম্মুখে আসছেন না। শীর্ষ নেতারা কারাগারে আটক। অপরদিকে গ্রেফতার আতংকে নেতাকর্মী আত্মগোপনে থাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও দেখা মিলছে না। মামলায় কাবু হয়ে পড়েছে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন।

বগুড়া জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাজু জানান, গ্রেফতার আতঙ্কে অনেক নেতাকর্মী দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছে না। দলীয় কর্মকাণ্ডে তারা অনুপস্থিত থাকছেন।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, চলতি বছরের তিন মাসে ২০ দলের আন্দোলনে নাশকতা, ভাঙচুর, মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় ৭৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির জামায়াতের নেতাকর্মীরা এজাহারভুক্ত আসামী রয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ জুন ২০১৫/শরীফ

সর্বশেষ খবর