বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাগরে বেড়েছে ডাকাতি আতঙ্কে জেলেরা

সায়েদ জালাল উদ্দিন, কক্সবাজার

বঙ্গোপসাগরে বেড়েছে ডাকাতি। মাছধরা ট্রলার ডাকাতিতে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে জলদস্যুরা। ডাকাতির সময় নিজেদের ট্রলারের পরিবর্তে পরিচিত ট্রলার কিংবা ফিশিংবোট ব্যবহার করছে। অপহরণ করে দাবি করছে মুক্তিপণ। এতে জেলেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়ায় জড়ো হয়েছে বিভিন্ন এলাকার ডাকাতরা। সেখানে তারা বেঁধেছে শক্ত ঘাঁটি।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, সাগরে প্রতিনিয়ত ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। গত এক সপ্তাহে অন্তত ১০টি ফিশিংবোট ডাকাতির শিকার হয়েছে। দস্যুদের হাতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ৫০ জেলে। কোস্টগার্ডের দুর্বলতার সুযোগে এসব ঘটনা ঘটছে। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনাদিয়া দ্বীপে বিভিন্ন এলাকার ডাকাতরা জড়ো হয়েছে। সেখানে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে তারা। ইলিশ ধরার মৌসুম টার্গেট করে তারা জড়ো হচ্ছেন। এরই মধ্যে কয়েকটি বোটে ডাকাতি চালিয়েছে। এ কারণে জেলে ও বোট মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলেরা আরও জানান, সোনাদিয়ার দুর্ধর্ষ জলদস্যু জাম্বু বাহিনী, সরওয়ার বতইল্যা বাহিনী ও নকিব বাহিনী এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের নেতৃত্বে বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, হাটখালী, চকরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার দস্যুরা সোনাদিয়া চ্যানেলে জড়ো হয়েছে। এ বাহিনীতে রয়েছে- শাব্বির, মোনাফ, মোবারক, আনজু, জাহাঙ্গীর, বক্কর, সাদ্দাম, আবুল কালাম, আব্দুল বারি, শফিসহ অর্ধশত জলদস্যু। তারাই পুরো সাগর নিয়ন্ত্রণ করছে। চালাচ্ছে দস্যুতা ও লুটপাট। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত মঙ্গলবার সাগরের সোনাদিয়া চ্যানেল থেকে অস্ত্রের মুখে ‘এফবি ভাই ভাই’ নামে একটি ফিশিংবোটসহ মাঝিকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। এ সময় ডাকাতের কবল থেকে অন্য একটি বোটে করে ১৭ জেলে ফিরে আসেন। গতকাল শওকতুল ইসলামের ‘এফভি নাসের’ নামের একটি ফিশিংবোট দস্যুতার শিকার হয়। কক্সবাজার শহরের কলাতলি পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এ ঘটনা ঘটে। এ দিন দস্যুদের গুলিতে দুই জেলে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ১৮ জন। লুট করা হয়েছে এক লাখ টাকার মাছসহ ট্রলারের বিভিন্ন সরঞ্জাম। বোট মালিকরা জানান, প্রজনন মৌসুমের পর প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে জেলেদের জালে। কিন্তু তারা এখন কূলে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। সোনাদিয়ায় জড়ো হওয়া ডাকাতরা যে কোনো মুহূর্তে ট্রলারে হানা দিতে পারে এই ভেবে। জলদস্যুদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা বোটমালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, ইলিশ প্রজনন মৌসুম শেষে মাছধরা ট্রলারগুলো সাগরে যাওয়া শুরু করেছে। ডাকাতি ও অপহরণের খবরে জেলেদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ভর করছে। কক্সবাজার কোস্টগার্ড স্টেশনের পিটি অফিসার নান্নু মিয়া বলেন, সাগরে দস্যুতা আতঙ্ক উদ্বেগের। দস্যুতা বন্ধে যৌথ অভিযান জরুরি। এ জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি দরকার। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। সাগরে দস্যুতা বন্ধে করণীয় ঠিক করতে যৌথসভা ডাকা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর