পঞ্চগড়ের গ্রামে গ্রামে বসছে জুয়ার আসর। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন জুয়ায়। প্রতি আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। মাদকের মতোই জুয়ার ছোবল এখন জেলার সর্বত্র। এ খেলায় অনেকে নিঃস্ব হচ্ছেন। সৃষ্টি হচ্ছে পারিবারিক অশান্তি। জানা গেছে, বর্ষা শেষে অগ্রহায়ণের ধান কাটা এবং পাথর উত্তোলনের কাজ শুরু হওয়া পর্যন্ত পঞ্চগড়ের বেশির ভাগ কৃষক শ্রমিক থাকেন কর্মহীন। পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই জুয়া খেলায় সময় কাটাচ্ছেন। জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা, হুলাসুজোত, তীরণই হাটের পাশে ইউক্লেপ্টাসের বাগানে, তেঁতুলিয়া বাজারের শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস (দালাল অফিস), মাঝিপাড়া বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মালামালের দোকান, অপর একটি কাপড়ের দোকান, শালবাহান বাজার, ভজনপুর বাজার, মালিগছ, ডাঙ্গাপাড়া, বামনপাড়া, চৌরাস্তা বাজার, দেবনগর বাজার, সদর উপজেলার দশমাইল বাজার, কাজিরহাট, মডেলহাট, টুনিরহাট, হাঁড়িভাসা, চাকলাবাজার, বড়শশী বজার, বালাপাড়া বাজার, দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাওলাগঞ্জ বাজার, চিলাহাটি, বোদা উপজেলার সাকোয়া বাজার, ময়দানদিঘী বাজার, কালিয়াগঞ্জ বাজার, আটোয়ারী উপজেলার নতুন হাটবাজার, ঝলই শালশিড়ি, মির্জাপুরসহ বেশির ভাগ হাটবাজারে দিনে রাতে জুয়ার আসর বসছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার গিতালগছ গ্রামের শাহ আলমকে জুয়ার বোর্ড থেকে তুলে নিয়ে যায় তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়। ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের জুমের আলীর বাড়িতেই বসত জুয়া খেলা। সম্প্রতি জুয়ার বোর্ডে অনেক টাকা হেরে এখন সে পরিবার থেকে পলাতক। মুঠোফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি ভজনপুর বাজারের আল আমিন রিসিভ করে জানান মোবাইল সেটটি সে এক হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধক রেখেছে। ভজনপুর বাজারের আবদুল জলিল জানান,‘ এই বাজারের ছোট ছোট দোকানদাররা জুয়া খেলায় জড়িয়ে পড়েছেন। সামাজিকভাবে তাদের বিচার করাও যায় না। কারণ ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিরা তাদের ভোটেই নির্বাচিত হয়। ফলে তাদের কেউ কিছু বলে না।’ মাঝিপাড়া মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আবদুল খালেক জানান, ‘সামাজিক-পারিবারিক বন্ধনগুলো হালকা হয়ে যাচ্ছে। কেউ কাউকে শাসন করতে পারে না এখন। তাই জুয়া খেলা এখন প্রকাশ্যেই হচ্ছে।’ তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ জেড আসাদুজ্জামান জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলায় কোনো জুয়া হয় না। আপনারা যা শুনেছেন সব ভুয়া। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।