বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শুঁটকি পল্লীর ১০ হাজার জেলের দুঃসহ জীবন

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের দুবলার ‘বনহীন’ পাঁচটি চরের অস্থায়ী শুঁটকিপল্লীর ১০ হাজার জেলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এক একটি ছাপড়া ঘরে থাকতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ জেলেকে। এসব জেলের জন্য নেই ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা ও বিশুদ্ধ খাবার পানি ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় নেই আশ্রয়কেন্দ । এর ওপর প্রতিনিয়ত তাদের তাড়া করে ফেরে মুক্তিপণ দাবিতে বনদস্যুদের হাতে অপহৃত হওয়ার আতঙ্ক। জানা গেছে, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলাসহ বিভিন্ন চরে শুরু হয় শুঁটকি আহরণ। মৌসুম থাকে পরবর্তী পাঁচ মাস। চলতি বছর সুন্দরবন সুরক্ষায় বনের সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করে বন মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরের শুরুতে পূর্ব সুন্দরবনের উপকূলীয় চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত ও অস্থায়ী জেলে পল্লী নির্মাণ আটকে যায়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে শুঁটকিপল্লীর ভাগ্য। এই অবস্থায় আহরণ মৌসুম এক মাস কমিয়ে ১৪টি চরের স্থলে বনহীন পাঁচটি চরে এবার শুঁটকির জন্য অস্থায়ী জেলেপল্লী নির্মাণের অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়। শর্ত জুড়ে দেয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার ছাড়া সুন্দরবনের অন্য কোনো বনজ সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে না। এসব অস্থায়ী পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, শত প্রতিকূলতার মধ্যে চলছে শুঁটকির জন্য মাছ আহরণ। মৌসুম শুরুর তিন সপ্তাহ পর ৪ নভেম্বর অনুমতি পেয়ে জেলেরা এখন ফিশিং ট্রলার, ইঞ্জিনচালিত নৌযান ও নৌকায় আহরিত মাছ নিয়ে সাগর থেকে ফিরছেন। মেহেরআলীর চরের অস্থায়ী জেলে পল্লীর বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর থাইক্কা মাছ ধরার মৌসুমে দুবলার শুঁটকিপল্লীতে মাছ শুঁটকি করি। মৌসুমে যা পাই তা দিয়া সারা বছর বৌ-পোলা লইয়া কোনোমতে খাইয়া না খাইয়া বাইচা আছি। এই পল্লীর ১০ হাজার জেলে দিয়া দেশ হাজার হাজার টাহা কামায়। তয় আমাগো দিক কেউ চায় না। মোগো দুর্ভোগের শ্যাষ নাই।’ জেলে রহিম বলেন, ‘থাহনের তো অসুবিদা আছেই। হের পর সবহানে নোনা পানি, খাওনের পানি নাই। রোগ বালাই বা শাপ কামড়াইলে ও কুমিরে ধরলে ডাক্তার দেহানোর উপায় নাই। ঝড় আইলে এহানে মোগো থাহনের কোনো আশ্রয় কেন্দ  নাই।’ মনোরঞ্জন মালো জানান, প্রতি বছর শুঁটকি মৌসুমের আগে জাল ও খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে সুদে মহাজনদের থেকে লোন করতে হয়। বনদস্যুদের কবলে পড়ে মুক্তিপণ দেওয়া না লাগলে ধার দেনা দিয়ে কিছু থাকে। আর মুক্তিপণ দেওয়া লাগলে এক একজন জেলেকে ৫০/৬০ হাজার টাকা দেনায় পড়তে হয়। তিনি শুঁটকি মৌসুমে সাগরে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও র‌্যাবের টহল জোরদারের দাবি জানান। সুন্দরবনের দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়াউদ্দীন জানান, কোনো সরকারই শুঁটকি পল্লীর ১০/১২ হাজার জেলে ও বহরদারদের (শুঁটকি ব্যবসায়ী) সমস্যা সমাধানে আন্তরিক নয়। প্রতিবছর সুন্দরবনের শুঁটকিপল্লীর জেলেদের আহরিত শুঁটকি রপ্তানি করে দেশ শত শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। যারা এই কাজে জড়িত তাদের সমস্যা সমাধানে সরকার কখনো এগিয়ে আসে না। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম জানান, এবার মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া আকারে জেলেদের অস্থায়ী ছাপড়া ঘর নির্মাণ করতে দেওয়া হয়েছে। তবে বনে টহল জোরদার রয়েছে। জেলেদের রক্ষায় বনরক্ষীর পাশাপাশি র‌্যাব-কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর