রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতার অবৈধ দখলে ২১টি বালুমহাল

সহযোগিতায় সরকার দলীয় এমপির ভাগ্নে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

উচ্চ আদালতকে ভুল তথ্য ও ব্যাখ্যা দিয়ে কুষ্টিয়ার ২১টি বালুমহাল গত ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোগদখল করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। আইনি জটিলতার কারণে বার বার চেষ্টা করেও বালুমহালগুলো ইজারা দিতে পারছে না স্থানীয় জেলা প্রশাসন। ফলে গত ৬ বছরে অন্তত ১৩ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। বালুমহালগুলো দখলমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে স্থানীয় জেলা প্রশাসন থেকে সর্বশেষ বালুমহালগুলোর ইজারা দেওয়া হয়। এরপর থেকে আর ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই বছর পদ্মা ও গড়াই নদীর নাব্য রক্ষার কথা বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সহযোগিতায় বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক মাসুম বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে অনুমতি নিয়ে ভেড়ামারায় বালু উত্তোলন শুরু করেন। বিআইডব্লিউটিএ তাকে ৬ মাসের মেয়াদে ৩০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়। পরে ২০০৯ সালে ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন বালু উত্তোলনের দরপত্র আহ্বান করতে গেলে বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক মাসুম ৩০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন অসম্পন্ন বলে দাবি করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। আইনি জটিলতায় এর পর থেকে বালুমহালগুলো আর ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে, গত ২৭ জুলাই ২০১৪ সালে বিআইডব্লিউটিএ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, আনোয়ারুল হক মাসুম শর্তানুযায়ী বালু উত্তোলনের সঠিক হিসাব তাদের কার‌্যালয়ে জমা  দেননি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার প্রাপ্য ৩০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করেছেন। ওই ব্যক্তি যাতে আর বালু উত্তোলন করতে না পারেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতিবেদনে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিআইডব্লিউটিএ-এর বেশ কিছু শর্তে ৬ মাসের জন্য নদীর তলদেশ থেকে মাত্র ৩০ লাখ ঘনফুট মাটি ও বালু উত্তোলনের অনুমতি নেন আনোয়ারুল হক মাসুম। এরপর তিনিসহ কয়েকজন গত ৬ বছরে কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করে নিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, ৩০ লাখ ঘনফুট বালু একদিনেই উত্তোলন সম্ভব। সেখানে ৬ বছরেও সে বালু উত্তোলন শেষ হলো না। তিনি জানান, উচ্চ আদালতকে ভুল তথ্য ও ব্যাখ্যা দিয়ে তারা এসব বালুমহাল নিজেদের দখলে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। স্থানীয়রা জানান, বিএনপি নেতা মাসুমের সঙ্গে কুষ্টিয়ার সরকারদলীয় এক প্রভাবশালী এমপির ভাগ্নে আওয়ামী লীগ নেতা বিটু খান, বিএনপি নেতা আবু সাঈদ খান এই বালুমহাল লুটপাটে জড়িত। জানা গেছে, রিট মামলা দায়েরের আগে প্রতি বছর ১ কোটি ৪ লাখ টাকার বেশি আয় হতো বালুমহালগুলো থেকে। সে মোতাবেক ৬ বছরে সরকারের প্রায় ১৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানান, বালুমহালগুলো নিয়ে বর্তমানে  বেশ কিছু রিট মামলা রয়েছে হাইকোর্টে। এর মধ্যে গত ২ নভেম্বর ৮টি রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। মামলাগুলো পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের তদবিরে ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে আদালতে কৌঁসুলি নিয়োগ করা হয়েছে। তবে কুষ্টিয়ার বালুমহালের বৈধ ইজারাদার বলে দাবিদার বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক মাসুম জানান, আমিই একমাত্র ব্যক্তি বিআইডব্লিউটিএ থেকে বৈধভাবে ৩০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমোদন নিয়েছি। তবে ৩০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করতে কত বছর লাগে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সর্বশেষ খবর