শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পেও আড়াই কোটি টাকা লুট

সুবিধাভোগীরা এখন ভুক্তভোগী

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা সমন্বয়কারীসহ তিনজনকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। টাকা জমা দিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ সুবিধাভোগীর বদলে ভুক্তভোগী হয়ে গেছেন। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার গ্রাম্য বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ২০১১ সালে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে উপজেলার জগন্নাথপুর, বালিয়া, বেগুনবাড়ী, নারগুণ, রাজাগাঁও, জামালপুর, বড়গাঁওসহ ২১টি ইউনিয়নে ১৮৯টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি রয়েছে। এসব সমিতিতে সদস্য রয়েছেন ৬০ জন করে। হতদরিদ্র সদস্যরা মাসে মাসে কিস্তিতে ২০০ টাকা দিয়ে বছরে দুই হাজার ৪০০ টাকা সঞ্চয় করেন। নিয়মানুযায়ী সদস্যদের হিসাবের অনুকূলে সরকারি সমপরিমাণের টাকা জমা হওয়ার কথা। এক বছর পর থেকে প্রত্যেককে সঞ্চয়, সরকারি ঋণ ও প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের টাকা মিলে সমভাবে বণ্টনের মাধ্যমে ঋণ দিতে হবে। এ নিয়মের তোয়াক্কা না করে সদস্যদের জমা টাকা থেকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। সর্বশেষ গত জুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে দুই হাজার ৫১৯ সদস্যের ঋণ আবেদন অনুমোদন করানো হয়। নিয়মানুযায়ী আবেদন ছাপানোর পাশাপাশি সফট কপি অনলাইনে অনুমোদন করা প্রয়োজন। কিন্তু ইউএনওর অনুমোদন না নিয়ে উপজেলা সমন্ব্বয়কারী ফাইল অনুমোদন করে সদস্যদের ঋণ প্রদানের নামে দুই কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে এর পুরোটা তিনি আত্মসাত্ করেন। ঋণের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ ও অনুমোদিত ঋণের টাকা প্রদানে টালবাহানা করলে ইউএনওর সন্দেহ হয়। তিনি বিষয়টি ঢাকায় প্রকল্প পরিচালককে লিখিতভাবে জানান। গত ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয় অডিট। অডিটে মোটা অঙ্কের অর্থের গড়মিল পেলে উপজেলা সমন্ব্বয়কারী পজিরুল ইসলাম, ব্যাংক সিগনোটরি ও মাঠকর্মী সালাউদ্দীন মানিক ও পরিমল সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বালিয়া সমিতির মাঠকর্মী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে সদস্যদের থেকে তোলা কিস্তির টাকা টিটি করে কেন্দে র প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর নিয়ম থাকলেও সমন্বয়ক তা পাঠাননি। এভাবে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।’ ফিল্ড সুপারভাইজার সালাউদ্দিন মানিক বলেন, ‘উত্তোলন করা ঋণের টাকা সমন্ব্বয়কারী পজিরুল ইসলামের কাছে রয়েছে। সদস্যদের ঋণ পরিশোধের যে টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয় তিনি তা জমা না করে নিজের কাছে রেখেছেন। তাই এ সমস্যার সৃষ্টি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমন্বয়কারী আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি চেকে স্বাক্ষর করতে বললে আমরা স্বাক্ষর করি। টাকা কি করেছেন, তা তিনি জানেন।’ ঠাকুরগাঁ সদর ইউএনও আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের ঋণ আবেদনের কিছু ছাপা কপি অনুমোদন নিলেও সফট কপি অনুমোদন গ্রহণে টালবাহানা করেন উপজেলা সমন্ব্বয়কারী। এতে সন্দেহ হয়ে আমি বিষয়টি গোপনে তদন্ত করি। তদন্তে জানা যায়, অনুমোদিত ঋণের টাকা ব্যাংক থেকে তোলা হলেও মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা পাননি।’

সর্বশেষ খবর