শিরোনাম
শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

অবহেলিতই রয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস, পোল্ট্রি শিল্পে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে ব্রাহ্মণবড়িয়ার। দেশের পূর্ব জনপদের অন্যতম রপ্তানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দর ও ভারতের সেভেন সিস্টারের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম সড়কপথ ও নৌবন্দর আশুগঞ্জ এ জেলায় অবস্থিত। তারপরও অবহেলিত রয়ে গেছে জেলাটি। বিশেষ করে দেড়শ বছরের প্রাচীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় দীর্ঘদিনেও লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। গড়ে উঠেনি ভারী ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে জেলার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন বেলাল—

 

কর্মসংস্থান সৃষ্টি

করতে হবে

— তাজ মো. ইয়াছিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাগরিক সমাজের সভাপতি জানান, বিদ্যুতের রাজধানী খ্যাত দেশের অন্যতম নৌ-বন্দর

আশুগঞ্জ। সরকারি-বেসরকারি ১৩টি বিদ্যুৎ প্লান্ট আছে এখানে। ২০১৭ সালের মধ্যে অন্তত এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে আশুগঞ্জে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সারা দেশে শিল্পায়ন ও আবাসিক গৃহে ব্যবহৃত হয়। আশুগঞ্জের বিদ্যুৎ দিয়ে এ অঞ্চলে বিদ্যুতচালিত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, মেঘনা নদীবক্ষে জেগে উঠা চরে সরকারি-বেসরকারিভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। আশুগঞ্জের সার কারখানার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিশাল জায়গায় গ্যাস ও বিদ্যুত্চালিত কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা করা গেলে স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে করে তৈরি হবে দেশের দক্ষ ও পেশাদারিত্বপূর্ণ বিশাল জনবল। যার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বেই বাংলাদেশের উন্নয়নমুখী ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দ্রুত প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। এ জন্য সরকারিভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন।

 

 

সবাই এগিয়ে এলে শিল্পায়নে বিপ্লব ঘটবে

— রিয়াজউদ্দিন জামি

প্রাকৃতিক গ্যাস বিশ্বব্যাপী অপ্রতিদ্বন্দ্বী জ্বালানি শক্তি। প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

এ জেলার মাটির তলদেশে রয়েছে জ্বালানির অফুরন্ত ভাণ্ডার। ১৯৬৫ সাল থেকে বিরামহীন গতিতে উত্তোলন চলছে প্রাকৃতিক এ জ্বালানি গ্যাস। আধুনিক বিশ্বে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং গৃহস্থালির কাজে এর ব্যবহারের জুড়ি নেই। প্রতিদিন অন্তত সাড়ে চারশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এ গ্যাসের সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে গ্যাসচালিত বিপুল সংখ্যক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। এমনটাই জানালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সদস্যসচিব রিয়াজউদ্দিন জামি। তার মতে, সরকারের পরিকল্পনা ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাঝারি ও ভারী গ্যাসচালিত শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বের সব দেশেই নিজস্ব সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে সমৃদ্ধ হয়েছে। স্টিল মিল, সোডিয়াম সিলিকেট কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, খাদ্যসামগ্রী কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।

 

 


পৌরসভা প্রথম শ্রেণির জীবনযাত্রা তৃতীয়

— আশিকুল ইসলাম

 

বিশিষ্ট সাংবাদিক আশিকুল ইসলাম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার বয়স

১৩৭ বছর। বহু পুরনো এ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির হলেও জীবনমানের প্রশ্নে এখনো তৃতীয় শ্রেণির। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য পৌরসভার প্রতিটি সেশনে চেয়ারম্যান, মেয়র আকাশচুম্বী বাজেট পেশ করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। এ পৌরসভায় এখন পর্যন্ত আধুনিক কসাইখানা, শিশুপার্ক ও বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এক রাস্তার শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও জনপ্রতিনিধিরা এক রাস্তার শহর থেকে দু্ই রাস্তা করতে পারেনি। আশিকুল ইসলাম বলেন— প্রধান খালটি শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। এ খালের কান্দিপাড়ায় ভাঙা ব্রিজটি দিয়ে কোনো মতে পায়ে হেঁটে পারাপার হওয়া যায়। কাজীপাড়ায় নবনির্মিত ব্রিজ হলেও এটা দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে সীমিত আকারে। তাই যানজট লেগেই আছে। এতে শহরবাসী পোহাচ্ছেন দুর্ভোগ। শহরের পুনিয়াউট সড়ক দিয়ে নারী বিশেষ করে প্রসূতি মায়েরা জিহ্বায় কামড় দিয়ে চলাচল করতে হয়।

 

 

সহায়তা পেলে বিকশিত হবে পোল্ট্রি শিল্প

— মাহাবুবুল বারী চৌধুরী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্ভবনাময় এক শিল্পের নাম পোল্ট্রি শিল্প। কিন্তু এখানে এর সুষ্ঠু ও সঠিক তদারকি নেই। তাই বিকাশ হচ্ছে না এ শিল্পের। এমনটাই মনে করেন— জেলার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু। তিনি বলেন— সারা জেলায় অন্তত আড়াই হাজার ছোটবড় পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ শিল্প। গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে সংশ্লিষ্টদের গুনতে হচ্ছে লোকসান। বিশেষ করে জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বেহাল হওয়ায় দুরবস্থা চলছে এ শিল্পের। পোল্ট্রি মুরগি, ডিম ও মুরগির খাবার উপকরণ সরবরাহ ব্যাহত হয় নাজুক সড়ক যোগাযোগের কারণে। জেলার খামারগুলোতে বিপুল পরিমাণ মুরগি ও ডিম উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর তা সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু এ জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ খারাপ হওয়ায় উৎপাদিত ডিম সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া ফিডের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পোল্ট্রি খাত। প্রয়োজনীয় ব্যাংক ঋণ প্রদান ও সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে এ শিল্প বিকাশমান শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করেন এ রাজনীতিবীদ।

সর্বশেষ খবর