মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

সুন্দরবনে গহিন অরণ্যে আগুন

পুড়ে ছাই আধা বর্গকিলোমিটার

বাগেরহাট প্রতিনিধি

পূর্ব সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে লাগা আগুন ২০ ঘণ্টা পর গতকাল দুপুর ১২টায় আংশিক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অরণ্যের কোথাও কোথাও থেমে থেমে আগুন জ্বলছিল। আগুনে সুন্দরবনের আধা বর্গ কিলোমিটার এলাকার গাছপালা পুড়ে গেছে। রবিবার বিকাল ৪টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশনের নাংলীর শিকদারের ছিলার গহীন অরণ্যে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, আগুন গতকাল দুপুর ১২টায় আংশিক নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মরা ভোলা নদী থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার গহীন অরণ্যের এই আগুন সম্পূর্ণ নেভানো যায়নি। ফায়ার অব লাইনের মধ্যে কোথাও কোথাও ধোঁয়া কুণ্ডলি পাকিয়ে থেমে থেমে আগুন জ্বলে উঠছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বন সন্নিহিত লোকালয়ের কয়েকশ’ সাধারণ মানুষ, টাইগার টিমের সদস্য, সুন্দরবন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের মোড়েলগঞ্জ ইউনিটের সদস্যরা দুপুর পর্যন্ত নালা কেটে পানি ভরে ফায়ার অব লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করেন। দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এ সময়ের মধ্যে পুড়ে গেছে আধা বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা কয়েকশ’ একর বনভূমি। সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, ফায়ার অব লাইনের মধ্যে কোথাও কোথাও থেমে থেমে আগুন জ্বলছে। ওই আগুন নেভাতে ছোটাছুটি করছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ভোলা নদী থেকে স্যালো মেশিনের মাধ্যমে ফায়ার অব লাইনে পানি ভরে রাখা হচ্ছে। মোড়েলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ স্বপন কুমার জানান, এখন আর সুন্দরবনে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে বনের পচা শিকড়ে তৈরি হওয়া গ্যাসের লাইন ধরে মাটির নিচের দিয়ে আগুন অনেক দূরে চলে গেছে। সে কারণে মাটিতে ফায়ার অব লাইনের জন্য নালা কেটে তাতে পানি ভরে রাখতে হচ্ছে। এতে আগুন সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বনজীবী জানিয়েছেন, প্রভাবশালীরা প্রতি বছর সুন্দরবনের জলাশয়গুলো অলিখিতভাবে বনবিভাগের কাছ থেকে কথিত ইজারা নিয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার করে। ওই প্রভাবশালী চক্র সুন্দরবনের জলাশয় পরিষ্কার করার জন্য শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। কিন্তু সুন্দরবন বিভাগ এ বিষয় অবগত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ কখনই নেয়নি। ফলে প্রতি বছরই সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। এদিকে বনবিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (রেঞ্জার) গাজী মতিয়ার রহমান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহম?ুদ। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ বছরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ১৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার বনজসম্পদ ভস্মীভূত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর