বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাঙ্গাইল হতে পারে অনন্য শিল্প নগরী

নানা বৈচিত্র্যের কারণে টাঙ্গাইলের সুনাম ও সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। এই জেলায় যেমন জন্মেছেন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি, তেমনি পর্যটনের কেন্দ্রস্থল হিসেবেও গৌরব রয়েছে এর। শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতির দিক থেকেও টাঙ্গাইলের খ্যাতি সারা বাংলায়। এখানকার তাঁতের শাড়ি ও চমচমের আছে আলাদা ঐতিহ্য। যার সুনাম রয়েছে দেশে দেশে। সম্ভাবনাময় টাঙ্গাইলের নানা দিক নিয়ে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলা প্রতিনিধি মো. নাসির উদ্দিন—

 

পর্যটন কেন্দ্র-ইপিজেড স্থাপন করতে হবে

—নজরুল ইসলাম

ঢাকাস্থ টাঙ্গাইল জেলা সমিতির সভাপতি লায়ন মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী লোকের জন্মস্থান টাঙ্গাইল উন্নয়নের দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে শিক্ষাক্ষেত্রে জেলাটি অনেক এগিয়ে গেলেও এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোয়নি শিল্প ও সংস্কৃতি। তাই এগিয়ে নিতে হবে শিল্প-সাংস্কৃতিকে। ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘিতে পর্যটন কেন্দ্র ও ইপিজেড স্থাপন করতে পারলে ঘুরে যাবে জেলার উন্নয়নের চাকা। নজরুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। তাই উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হচ্ছে টাঙ্গাইল। এই জেলার উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গের ৯২টি রোডসহ ১২২টি রুটের হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে। জেলার উন্নয়নের দিকে নজর দিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। টাঙ্গাইলের লোকজন যেন ঢাকা গিয়ে অফিস করতে পারেন তার জন্য ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত চালু করা যেতে পারে ডেমু ট্রেন। জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে সা‘দত কলেজকে উন্নীত করতে হবে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিটা স্কুলে কম্পিউটার ও প্রজেক্টর প্রদান করে ডিজিটাল ক্লাসরুম বাস্তবায়ন করা দরকার। যমুনা ও ধলেশ্বরীর ভাঙন রোধ এবং সিংহরাগী আবাদপুর বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পুনর্গঠন করতে হবে মধুপুরে রাবার শিল্পের।

 

সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি

—হারুন অর রশিদ

‘নদী-চর, খাল-বিল, গজারীর বন-টাঙ্গাইলের শাড়ি তার গরবের ধন’ এই প্রবাদ থেকে বুঝা যায়, টাঙ্গাইলের সুনাম ও সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। অনেক সম্ভাবনার টাঙ্গাইলকে উন্নয়নের শীর্ষে নিতে জরুরি সুষ্ঠু পরিকল্পনা। পরিকল্পিত নগরায়ন, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন হলে এমনিতেই এগিয়ে যাবে জেলা— এমনটি মনে করেন টাঙ্গাইল ক্লাবের সহ-সভাপতি ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মো. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন— টাঙ্গাইল পৌর শহরের ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো ডামপিং করে কম্পোস্ট সার তৈরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে কৃষক কম মূল্যের এই সার ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। জেলা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের পাশাপশি দখলমুক্ত করে খনন করতে হবে লৌহজং নদীর দুই পার। টাঙ্গাইলকে অনেকে শিল্প ও সাংস্কৃতিক নগরী হিসেবে উল্লেখ করলে আজও এটি গড়ে উঠেনি সাংস্কৃতিক নগরী হিসেবে। সাংস্কৃতিক নগরী করতে হলে সংস্কৃতি বিকাশের জন্য জেলা শহরে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক হাজার সিটের মিলনায়তন নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া তাঁত শিল্পকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলতে পারলে টাঙ্গাইল যেমন হারানো গৌরব ফিরে পাবে, তেমনি হয়ে উঠবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। মধুপুরে শাল গজারীর বন রক্ষা করে গড়ে তুলতে হবে ইকোপার্ক।

 

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাই খেলার মাঠ

—শহীদুল আলম শহীদ

টাঙ্গাইল শহীদ ক্যাডেট একাডেমির চেয়ারম্যান মো. শহীদুল আলম শহীদের মতে, টাঙ্গাইলকে শিক্ষানগরী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা টাঙ্গাইল আসছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। শিক্ষা ক্ষেত্রে জেলা অনেক দূর এগিয়েছে। যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধরে রেখে গড়ে তুলতে হবে আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিটা স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় থাকতে হবে খেলার মাঠ। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এই শিক্ষানুরাগী বলেন— শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হলে প্রথমেই সব ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে যে সৃজন বা উদ্ভাবনীমূলক কাজ করার সুপ্ত প্রতিভা আছে, তা জাগিয়ে তুলতে হবে। সরে আসতে হবে মুখস্থ বিদ্যার প্রবণতা থেকে। শিক্ষক নিজেই তার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কৌশল উদ্ভাবন করবেন। এভাবেই গড়ে উঠবে দক্ষ মানব সম্পদ। আর দক্ষ মানব সম্পদ পেতে চাহিদামাফিক বিভিন্ন বিষয়ে মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। কোনো কোনো বিষয়ে কত সংখ্যক গ্রাজুয়েট দরকার তার পরিকল্পনা করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে সেই অনুযায়ী বিন্যস্ত করা দরকার। মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি উন্নত ও আধুনিক করতে হবে কর্মপরিবেশও। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে পারলে একটি জেলার যেমন উন্নয়ন সম্ভব, তেমনি দেশও পৌঁছে যাবে উন্নয়নের শিখরে।

 

প্রয়োজন বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা

—ইকবাল হোসেন

ভৌগোলিক কারণেই টাঙ্গাইল জেলা শহরের অবস্থান দেশের কেন্দ্র বিন্দুতে। আর রাজধানী ঢাকার কাছের জেলা হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক। গাজীপুরের চন্দ্রা-কালিয়াকৈরের পর থেকেই টাঙ্গাইলের সীমানা শুরু। টাঙ্গাইলেও আছে আধুনিক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার যথেষ্ট জমি ও উদ্যোক্তা। এখানে বিসিক শিল্প নগরী থাকলেও নানা সমস্যার কারণে স্থাপন হয়নি বড় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ছোটগুলোও নানা সমস্যা ও পুঁজির অভাবে বেশিদূর এগোতে পারছে না— এমনটাই মনে করেন টাঙ্গাইলের তারটিয়া বিসিক শিল্প নগরীর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইকবাল হোসেন খোকন।

তিনি বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে শিল্পমালিকরা এখানে গড়ে তুলতে পারেন বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বিসিকের কিছু কিছু কারখানায় গ্যাস সংযোগ নেই। সেগুলোতে গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। এছাড়া মির্জাপুরের গোড়াই থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যস্ত রাস্তার দুই পাশে বড় বড় কল-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় শিল্পপার্ক স্থাপন করতে পারলে টাঙ্গাইলে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হবে। ব্যবসায়ীরা উৎপাদিত পণ্য সহজে সারা দেশে এমনকি ভারতসহ বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবেন। ব্যবসার উন্নয়ন হলে উন্নয়ন হবে জনগণেরও। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে শিল্পনগরীর প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন— এমনটাই মত এই ব্যবসায়ী নেতার।

সর্বশেষ খবর