শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

চিতলমারীর ছয় গ্রামে ত্রাস জিম্মি সাধারণ মানুষ

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ৬ গ্রামের সাধারণ মানুষ। একের পর এক মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘুসহ নিরীহ মানুষ তাদের হামলা-চাঁদাবাজি-নির্যাতন ও রাতে ডাকাতির শিকার হচ্ছেন। এমনকি ঘরের মধ্যে ঢুকে বাবা-মা, ছেলে-মেয়েকে বেদম কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে মালামাল লুটে নিচ্ছে মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই বাহিনী বাগেরহাট জেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম ওই এলাকার কুনিয়া, চরকুনিয়া, রাজনগর, চিংগুড়িসহ ৬টি গ্রামে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। গতকাল বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার রাজনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ও কুনিয়া গ্রামের ঝরনা বেগম এসব অভিযোগ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তবে বলা হয়, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী সমাজসেবক মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামকে কদিন আগে কুনিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রকাশ্যে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী বদরুল বাহিনীর সদস্যরা। তাকে বিবস্ত্র করে অমানবিক অত্যাচার করে একটি পা ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর গাঁজা ও ইয়াবা দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করার চেষ্টা করা হয়। তখন এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। অচেতন অবস্থায় পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামকে উদ্ধার করে চিতলমারী হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এত কিছুর পরে থানা পুলিশ আজও মামলা নেয়নি। একইভাবে ওই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমানকেও লাঞ্ছিত করে। একইভাবে রবিবার রাতে ঘরে ঢুকে ওই সব সন্ত্রাসী রাজনগর গ্রামের শুকলাল ওরফে ফুটু বিশ্বাস (৬০) তার স্ত্রী মিনতী বিশ্বাস (৪৮) ও কলেজ পুড়ুয়া মেয়ে শিপলু বিশ্বাসকে (১৮) কুপিয়ে আহত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের চিতলমারী হাসপাতাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে আজও আহত-ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি মামলা করতে পারেনি। এর কয়েকদিন আগে অনুরূপ ঘরে ঢুকে কুনিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখ ও ঝরনা বেগমের দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মিতু খানমকে (১৫) হাত-পা-মুখ বেঁধে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করা হয়। একইভাবে চিংগুড়ি গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম এবং তার মা-বাবাসহ বাড়ির সাতজনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে এলাকাবাসীদের বাঁচাতে চিতলমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজিবর রহমান বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাননি। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, একদা রাজধানী সদরঘাটের শ্রমিক বদরুল শেখ বাড়ি ফিরে শাসক দলের আশ্রয়ে এলাকার ছফরুল, এমদাদ, আমজাদ, গাউস, আলমগীর, জাফর, শরিফ, আকবর, হাকিম রেজাল, হানিফসহ ১২/১৪ জনকে নিয়ে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে। এখন ওই সন্ত্রাসী বাহিনী চিতলমারী উপজেলার ৬টি গ্রামে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে। এদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ও ঝরনা বেগম।

সর্বশেষ খবর