বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সর্বত্রই অনিয়ম যেখানে

শেরপুর জেলা হাসপাতাল

শেরপুর প্রতিনিধি

রোগীর সেবার পরিবর্তে অনিয়ম আর দুর্নীতিই বেশি চলে শেরপুর জেলা হাসপাতালে। দালাল, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, ন্যাশনাল সার্ভিস, নামে-বেনামে নানা প্রজেক্টের লোক, প্রভাবশালীদের স্বজন, স্বেচ্ছাসেবী ও চোর সিন্ডিকেটের কাছে এখন জিম্মি হাসপাতালটি। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর।

ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোবারক হোসেন জানান, সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বসে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের সেবা প্রতিষ্ঠানে ওই শ্রেণির লোক কমবেশি থাকে। অভিযোগগুলো শুনেছি, তবে তথ্য-প্রমাণ পাইনি। কেউ অভিযুক্ত প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেব। অনিয়ম কমাতে ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।’

জানা যায়, অভিযুক্তরা কমিশনের শর্তে হাসপাতালে আসা রোগী বাগিয়ে নিয়ে যায় ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারে। সেখানে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার নামে পকেট ভারী করে ডাক্তার-দালাল দুই পক্ষই। হাসপাতালের সামনের দোকানগুলোতে ওষুধ কিনতেও দিতে হয় দালালি। দালাল বা সিন্ডিকেটের কথা না শুনলে রোগী ও স্বজনরা শিকার হন নানা বিড়ম্বনার। অভিযোগ আছে, কেউ কেউ নিজেকে সরকারি দলের পরিচয় দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। ওদের নজর থাকে সাধারণ রোগীর স্বজনদের পকেটে। জেলা হাসপাতালে চোরের উপদ্রবের অভিযোগ পুরনো। এখন বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। হাসপাতালের সামনে রাখা মোটরসাইকেল, ভর্তি রোগী-স্বজনের টাকা, মুঠোফোন চুরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নতুন যোগ হয়েছে পকেটমারের দৌরাত্ম্য।

সূত্র জানায়, কেউ কেউ বিভিন্ন ডাক্তারের পিওন-গার্ড বলে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে রোগীর টাকা। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এসবের প্রতিবাদ করতে চাইলে বিশেষ জায়গায় নালিশ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। জরুরি বিভাগ, প্যাথলজি, ওষুধ, নার্সিং সবখানে চলে হরিলুট। জরুরি বিভাগে কাটা-ছেঁড়ার চিকিৎসা হয় রীতিমতো দরদাম করে। এ কাজে সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্তদের চেয়ে নানা প্রজেক্টের লোক বা ট্রলি চালকরা বেশি সিদ্ধহস্ত। সুযোগ ও লোক বুঝে রোগীপ্রতি সেলাই বাবদ নেয় ১০০ টাকা। আবার সরকারি দেওয়া ইঞ্জেকশন (অবশ করার) বাবদ নেওয়া হয় ৫০০ টাকা করে। টাকা ছাড়া হয় না ড্রেসিং। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা লেখামাত্র দালালরা শুরু করে দৌড়ঝাঁপ। কিছু দালাল-প্যাথলজির সঙ্গে কোনো কোনো ডাক্তারের রয়েছে লেনদেনের সম্পর্ক। দালালরা একদিকে রোগীর অন্যদিকে ডাক্তারের কাছ থেকে কমিশন বাবদ ২০ শতাংশ, প্যাথলজি থেকে ৪০ শতাংশ, ওষুধের দোকান থেকে ১০ শতাংশ নগদে নিয়ে নিচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজিতে পরীক্ষা করতে গেলে সরকার নির্ধারিত টাকা নেওয়া হলেও রসিদ না দিয়ে কেউ কেউ সে টাকা আত্মসাৎ করছে। বিনামূল্যের জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন থাকে কিছু কর্মচারীর পকেটে। রোগী এলে ২০০ টাকার বিনিময়ে তা দেওয়া হয়। প্রসূতি এলে কতিপয় নার্স-আয়া ডাক্তার নেই, দেরি হলে সমস্যা হবে— এ রকম কমিশনের বিনিময়ে তুলে দেয় ক্লিনিকের লোকজনের হাতে। নানা কৌশলে বিনামূল্যের দামি ওষুধ হাসপাতাল থেকে তুলে বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে। বিষয়টি জেনেও কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডাক্তার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর