বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

পচা ধানে বিপন্ন হাওরের মৎস্য সম্পদ

প্রতিদিন ডেস্ক

সুনামগঞ্জে আগাম বন্যায় হাওরে তলিয়ে যাওয়া ধান পচে পানি দূষিত হয়ে বিপন্নের পথে মৎস্য সম্পদ। হাওরে ভেসে উঠতে শুরু করেছে মরা-আধামরা মাছ। দূষণের প্রভাব পড়েছে প্রধান নদী সুরমায়ও। বিভিন্ন খাল ও শাখা নদী দিয়ে সুরমায় হাওরের দূষিত পানি ঢোকায় এ নদীর মাছ তীরের কাছে ভেসে উঠছে। একই দশা নেত্রকোনায়ও। এ জেলার অন্যতম হাওর ডিঙ্গাপোতায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

সুনামগঞ্জ : জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, হাওরের ধান পচে যাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে হাইড্রোজেন সালফাইট ও এমোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়েছে। এ কারণে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। মাছের স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য যেখানে ৫-৭ পিপিএম অক্সিজেন থাকার কথা সেখানে হাওরে দূষিত পানিতে ২-৪ পিপিএম অক্সিজেন রয়েছে। মাছের জন্য ক্ষতিকারক এমোনিয়ার পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি এবং পানির এসিটিক ও ক্ষারীয় ভাব কমে এসেছে। যা মাছের স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য প্রতিকূল। সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল সদর উপজেলায় সুরমা নদীর ধাড়ারগাঁও থেকে নবীনগর পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ মাছ ধরছেন। সদর উপজেলার হালুয়ারঘাট গ্রামের পশু চিকিৎসক আব্দুজ জহুর বলেন, নদীতে অনেক মাছ ধরা পড়ার খবর পেয়ে জাল নিয়ে মাছ ধরতে এসেছি। সরকারি তথ্যমতে সুনামগঞ্জের ৮২ ভাগ বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এতে হাওরের কৃষকের বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করার যে সুযোগ ছিল, পানি দূষণের ফলে মাছ মরে যাওয়ায় সে সুযোগও সঙ্কোচিত হয়ে পড়বে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সরকারি পুনর্বাসন ছাড়া এখন বিকল্প পথ নেই। অন্যথায় হাওরের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শঙ্কর রঞ্জন দাশ জানান, পানিতে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য ১০টি হাওরে চুন ফেলা হচ্ছে।

নেত্রকোনা : মোহনগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওর ডিঙ্গাপোতা। ১ এপ্রিল ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় ফসলি জমি। যে কারণে কোনো কৃষক ঘরে তুলতে পারেনি বোরো ধান। কাঁচা ধান পচে সোমবার থেকে এই হাওরে মাছ মরতে শুরু করেছে। পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। তেঁতুলিয়া গ্রামের মুস্তাফিজ জানান, হাওরের পানি দিয়েই গোসলসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম করি। এখন পানিতে নামলে গা চুলকায়, গরুগুলোও অস্থির হয়ে যাচ্ছে। মল্লিকপুরের অনুপ তালুকদার বলেন, ধান হারিয়ে নিস্ব কৃষক শেষ সম্বল মাছের আশায় বসেছিল। সে আশাটুকুও আর রইল না। এখন কী করে বাঁচবে এসব কৃষক—এ ভাবনায় দিন কাটছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ সাহা জানান, মৎস্য গবেষকরা পানির পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা নিয়ে গেছেন। প্রাথমিক পরীক্ষায় পানিতে অক্সিজেন মাত্রা কম পাওয়া গেছে। অক্সিজেনের অভাবেই মারা যাচ্ছে মাছ।

সর্বশেষ খবর