বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

১১ বীজাগার প্রভাবশালীদের দখলে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে কৃষি বিভাগের ১১টি বীজাগার ভবন দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। এসব ভবনের কোনোটি এখন জুয়াড়ি ও মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। আবার কোনো বীজাগারের জায়গা দখলে নিয়ে কবরস্থান, দোকান ও বসতঘর নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২-৬৪ অর্থবছরে তত্কালীন সরকার কৃষিনির্ভর নাসিরনগর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ১২টিতে বীজাগার-কার্যালয় কাম কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ করে। লক্ষ্য ছিল কৃষকদের পরামর্শ প্রদান, সহজে উন্নতমানের বীজ, কীটনাশক ও ইউরিয়াসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করা। পরিকল্পনার অভাবে এসব বীজাগারের কার্যক্রম এখন বন্ধ। পরিত্যক্ত ভবনে চলছে মাদকসেবনসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ।

নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামে পাঁচ শতক জমির উপর বীজাগার ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর আশপাশের জায়গা কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, নির্মাণের পর কখনোই কৃষি কাজে ব্যবহার হয়নি ভবনটি। ভূরিশ্বর ইউনিয়নের বীজাগারটি ২০ শতাংশ ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও ভবন ছাড়া বাকি অংশ স্থানীয়দের দখলে। আট শতকের উপর ফান্দাউক বীজাগারের পুরাতন ভবনটি ২০০৪ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তত্কালীন ইউপি চেয়ারম্যান ফারুজ্জামান সেখানে দুটি পাকা ভবন ও একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করেন। ভবনগুলো এখন স্থানীয়দের দখলে। ৪৮ শতাংশ ভূমির উপর কুণ্ডা ইউনিয়নের বীজাগারটি স্থানীয়রা মসজিদের অংশ হিসেবে ব্যবহার করছেন। ভলাকুট গ্রামে আট শতক ভূমি তত্কালীন সরকার গ্রামের বারিন্দ্র দত্তের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে দিলীপ কিশোর জায়গাটি দখলে নিয়েছেন। তিনি ২০০২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কৃষি কার্যালয়ের পক্ষে রায় দেন। এরপরও দিলীপ জায়গাটি ছাড়েননি। গোয়ালনগর বীজাগারের ২২ শতাংশ জমি ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল হকের দখলে রয়েছ। পূর্বভাগ ইউনিয়ন বীজাগারের জায়গার একাংশ কোয়ারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় দখল করে শহীদ মিনার বানিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শৈলেশ চন্দ্র বলেন, ‘এটি ১০/১২ বছর আগে নির্মিত হয়েছে। তখন আমি ছিলাম না।’ একইভাবে কৃষি বিভাগের বেদখলে রয়েছে ধরমণ্ডল, হরিপুর ও গোকর্ণ ইউনিয়নের বীজাগারগুলো। তবে ২০ শতাংশের চাতলপাড় বীজাগারটি এখনও উপজেলা কৃষি বিভাগের আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে কোনো কার্যক্রম নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ১৯৬২-১৯৬৪ সালে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করেই বীজাগারগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। কোনো কার্যক্রম না থাকায় অধিকাংশ ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী ও বেদখল হয়ে গেছে। এসব বেদখল সম্পত্তি উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর