শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটে জিম্মি গ্রাহক, অর্থ যায় ১২ খাতে

দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। তারা গ্রাহকদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে। সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে দলিলপ্রতি অতিরিক্ত এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় সিন্ডিকেটকে। অভিযোগ আছে এ টাকা ভাগ ১২ খাতে। এর মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা প্রশাসনের কর্তা, রেজিস্ট্রি অফিসের লোক, দলিল লেখক, দালাল থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিক।

ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষ জানান, ‘সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মূলত দলিল রেজিস্ট্রির কার্যক্রম চলে। প্রতি সপ্তাহে রেজিস্ট্রি হয় কয়েকশ দলিল। হেবা দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্তি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানায় একাধিক সূত্র। তারপরও গ্রাহকদের জিম্মি করে দলিলপ্রতি এক হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া কবলা দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা তো সবাইকেই গুনতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ হয় দৌলতপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। আর এ অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। অফিস স্টাফ ছাড়াও সিন্ডিকেটে দলিল লেখক, দালাল, প্রশাসনের লোকজন ও রাজনৈতিক নেতারা জড়িত। এ অফিসে দলিল লেখকদের প্রকাশ্যে কোনো সংগঠন না থাকলেও গোপনে চলে তাদের কার্যক্রম। দলিল লেখক আজগর কথিত এ কমিটির আহ্বায়ক আর যুগ্ম আহ্বায়ক আরজ। তারা পুরো অফিস নিয়ন্ত্রণ করছেন।

সমপ্রতি দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসা দুই ব্যক্তি জানান, বিভিন্ন খাতের কথা বলে তাদের কাছ থেকে সরকারি ফির বাইরে এক হাজার ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। জানা যায়, প্রতিটি দলিল থেকে যে পরিমাণ অর্থ আদায় হয় তা ১২ খাতে যায়। এর মধ্যে রেজিস্ট্রি অফিসের বড় বাবু মন্টু দলিলপ্রতি ২০০, সাব রেজিস্ট্রি অফিস ২০০, উপজেলা যুবলীগের দুই নেতা ৫০০, দলিল লেখক আজগর ৫০, আরজ ৫০, নজরুল নামে এক ব্যক্তি ৫০, উপজেলা প্রশাসন ৫০, স্থানীয় মসজিদের নামে ৩০, সাংবাদিক ম্যানেজের নামে ৩০, নকলনবিসদের নামে ১০০ ও দালাল ৫০ টাকা পান।

অভিযোগের বিষয়ে আজগর আলী বলেন, ‘কিছু টাকা নেওয়া হয় এটা সত্য। এখানে অনেকে ফ্রি সার্ভিস দেন। কিছু টাকা তাদের দিতে হয়। আমাদের কেউ মারা গেলে তাদের এককালীন কিছু টাকা দেই। আপনারা (সাংবাদিক) আসলে কিছু টাকা দেই। এর বাইরে কেউ বলে থাকলে মিথ্যা বলেছে। আমাদের কোনো সমিতি নেই।’ ইউএনও তৌফিকুর রহমান জানান, চাঁদা আদায়ের কোনো অভিযোগ তার কাছে আসেনি। সুনির্দিষ্টি অভিযোগ পেলে   ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর