শিরোনাম
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাহাড়ে বেড়েই চলেছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি

ফারুক তাহের, বান্দরবান

বান্দরবানের পাহাড়চূড়া ও পাদদেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের বসবাস। দুর্ঘটনা, প্রাণহানিসহ নানা বিপর্যয় ঘটলেও বসতি তৈরি থেকে পিছু হটছেন না কেউ। বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বাড়তে থাকলেও এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান বা বসতি সংখ্যার তথ্য নেই প্রশাসনের হাতে। এমন অবস্থায় অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে যেনতেনভাবে বসতি গড়ে তুলছেন মানুষ। এতে যেমন তারা নিজেরা ঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন প্রকৃতিকেও। জানা গেছে, নদীভাঙনের কবলে পড়ে এবং বৈশ্বিক নানা কারণে উদ্বাস্তু হয়েপড়া মানুষ প্রথমেই আশ্রয়ের জন্য বেছে নেন পাহাড়কে। সমতলে বসতি গড়ার চেয়ে পাহাড়ে বসতি গড়া অনেক সহজ হওয়ায় এ বসতি বেড়েছে। কারও কারও মতে, ঝুঁকির মধ্যে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলেই পাহাড়ের বসতির হার বাড়ছে এবং দুর্ঘটনার মাত্রাও বাড়ছে। পরিবেশবিদদের মতে, প্রশাসন যদি আন্তরিকতা নিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে- তবে পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমবে না, বরং বাড়তেই থাকবে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. গোলাম মাহাবুব সরওয়ার বলেন, এখনো সমতলের চেয়ে পাহাড়ে সহজেই মানুষ তাদের আশ্রয় খুঁজে পান। প্রতিবছর নদীভাঙনের কবলে পড়েন দেশের প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষই ভূমিহীন ও উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছেন, যাদের একটি অংশ সহজে আশ্রয় খোঁজার জন্য পাহাড়কেই বেছে নেন। তাদের তখন মনেই থাকে না যে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন। এভাবে নদীভাঙা ও নিম্নআয়ের মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। বান্দরবানের কসাইপাড়ায় অন্তত ২০০ ফুট খাড়া পাহাড়ে বসবাসকারী আবুল বশর বলেন, আমরা শতাধিক পরিবার প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছি। কিন্তু এবারের বৃষ্টিতে যে রকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা হয়েছে, সে রকম আগে কখনো হয়নি। কিন্তু এখান থেকে অন্য কোথাও সরে যাওয়ারও জায়গা নেই। বান্দরবান সওজের জরিপ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের জরিপে দেখা গেছে- সড়কের ধারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বসবাস করছে ১৪৪ পরিবার। এদের মধ্যে বান্দরবান-কেরানিহাট সড়কে ১৫৫টি পরিবারের মধ্যে বান্দরবানের অংশে ৬৫ পরিবার, একই সড়কের মেঘলা পর্যটনের পুরোনো সড়কের অংশে ৬০ পরিবার, বান্দরবান- রোয়াংছড়ি সড়কে সাত পরিবার, আজিজনগর-গজালিয়া সড়কে ১০ পরিবার, বান্দরবান-বাঙ্গালহালিয়া সড়কে দুই পরিবার রয়েছে। পরিবারগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে সরানো উচিত। না হলে যেকোনো সময় পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও সড়ক  যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আরও প্রায় ১০০ পরিবারের সড়কের কিনারে বসবাস রয়েছে।

সর্বশেষ খবর