শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘একই রকম ঘাম ঝরলেও হামার মুজুরি কম কেনে’

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

‘একই রকম ঘাম ঝরলেও হামার মুজুরি কম কেনে’

পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন নারী শ্রমিকরা

কাক ডাকা ভোরে উঠে সংসারের সব কাজ সেরে বেরিয়ে পড়েন পঞ্চগড়ের হাজার হাজার নারী শ্রমিক। সারা দিন পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সংসারের হাল ধরেছেন এসব নারী। সমান পরিশ্রম করলেও পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন কম। কর্মস্থলে যেতে একটু দেরি হলে শুনতে হয় গঞ্ছনা।

ফজরের আযান শুনে ঘুম থেকে উঠেন রেহানা বেগম। নিজের ও তিন কন্যার জন্য রান্না করেন। সন্তানদের কোনো দিন খাইয়ে কোনো দিন না খাইয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় তাঁকে। দেরি করে কাজে গেলে মহাজনের গালি শুনতে হয়। কখনো দেরির কারণে কাজে নেওয়া হয় না। পুরুষ শ্রমিকদের দেরি হলেও চলে কিন্তু মেয়েদের দেরি করা যাবে না। রেহানা বলেন, ‘কয়েক বছর আগত স্বামী পালায় গিয়া ঢাকাত আরেকটা বিয়ে করেছে। পাথর ক্র্যাশিং মেশিনত কাজ করে সংসার চালাছু। তিন মেয়েকে লেখাপড়া করাছু। পুরুষদের লগত সমান সমান কাজ করি। কিন্তু হামার মুজুরী কম। একখান রোদ একই রকম ঘাম ঝরে হামার কিন্তু মজুরি কম হবে কেনে? পুরুষলার মতো মোর ১০০ টাকা বেশি আয় হলে ছুয়ালাক ভাল খাবার কিনে দিবা পারিম।’ তরিমন নেছা নামে আরেক শ্রমিক বলেন— ‘ছেলে সন্তান নাই। স্বামী অসুস্থ। মেসিনত কাম করে খাই। মজুরি ঠিকঠাক পাই না।’ তেঁতুলিয়া উপজেলা পাথর ও বালু ব্যবসায়ী-শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ইব্রাহীম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে কর্মরত নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য চলছে। আমরা সমিতি থেকে ব্যবসায়ীদের সমান মজুরি দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছি’। পঞ্চগড় জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য ও নারী উন্নয়ন কর্মী আকতারুন্নাহার সাকি বলেন, ‘এখানকার নারী শ্রমিকদের মজুরি বণ্টন নিয়ে কোনো নীতিমালা নেই। তাই তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’ জানা যায়, এক সময় পঞ্চগড়ের নারীরা ঘর থেকে বের হতেন না। নিজের প্রয়োজন ও অভাবের তাড়নায় এখন প্রায় ৩০ হাজার নারী পাথর শিল্পে জড়িত। এছাড়া এ জেলায় ভূ-গর্ভস্থ পাথর উত্তোলন-প্রক্রিয়াজাত ছাড়াও চা চাষ, চা পাতা সংগ্রহ, ভবন নির্মাণ ও কৃষি কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকা অপরিসীম। সকাল-সন্ধ্যা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন এসব নারী। সমান কাজ করেও তাদের ভাগ্যে মিলে না সমান মজুরি। ক্র্যশিং মেশিনে সারা দিন কাজ করে একজন পুরুষ ৪০০-৫০০ টাকা মজুরি পেলেও নারী শ্রমিক পান ২৫০-৩০০।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর