বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
যমুনা সার কারখানা থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস বিক্রি বন্ধ

বিপাকে শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ

জামালপুর প্রতিনিধি

জামালপুরে দেশের বৃহত্তম যমুনা সার কারখানা থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস বিক্রি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে এ গ্যাসনির্ভর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। প্রায় এক মাস ধরে অ্যামোনিয়া বিক্রি বন্ধ থাকায় এর দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। একই সঙ্গে এই খাতে এক মাসে যমুনা সার কারখানার ক্ষতি হয়েছে প্রায় কোটি টাকা। তাছাড়া অবিক্রীত অ্যামোনিয়া বাতাসে ছেড়ে দেওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কারখানার আশপাশের এলাকা। জানা যায়, ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত যমুনা সার কারখানার ইউরিয়া তৈরির অন্যতম উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া গ্যাস। যমুনা সার কারখানায় যে পরিমাণ গ্যাস প্রয়োজন কারখানার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তার চেয়ে কয়েক বেশি অ্যামোনিয়া উৎপাদন হচ্ছিল। অতিরিক্ত গ্যাস বাতাসে ছেড়ে দেওয়া হতো। এতে আশপাশের গ্রামগুলো মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। গাছপালা, ফসলি জমি পুড়ে নষ্ট হতো। মরে যেতো পুকুরের মাছ। এ অবস্থায় পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সাল থেকে তরল এই গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি শুরু করে। বিসিআইসির নীতিমালা অনুযায়ী ডিলার নিয়োগ করে অ্যামোনিয়া বিক্রি করা হচ্ছিল। বরফকল, আয়রন ফ্যাক্টরি, রং কারখানা, স্পিনিং মিল, কোল্ড স্টোরেজ, গ্লাস ফ্যাক্টরি, মত্স্য হিমায়িতকরণ, ওষুধ কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অ্যামোনিয়ার বিপুল চাহিদা। গত ২১ আগস্ট দুদকের টাঙ্গাইল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম যমুনা সার কারখানায় অভিযান চালিয়ে নম্বর গড়মিল থাকায় ৯৯টি সিলিন্ডার জব্দ ও অ্যামোনিয়া বিক্রির অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। দুদকের অভিযানের পর থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষ এ গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দেয়। ঢাকা সামাহ রেজার ইন্ড্রাস্ট্রিজের শহিদুল ইসলাম জানান, অ্যামোনিয়ার অভাবে তাদের কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। যমুনার প্রতি সিলিন্ডার অ্যামোনিয়ার সর্বোচ্চ দাম ছিল পাঁচ হাজার টাকা। এখন ১৪ হাজারেও মিলছে না। পটুয়াখালীর শুভ আইস প্লান্টের সুরুজ মিয়া ও একটি ইলিশ প্রক্রিয়াজাত ফ্যাক্টরির মজনু মিয়া জানান, অ্যামোনিয়ার অভাবে তাদের উৎপাদন অর্ধেক কমে গেছে। যমুনা সার কারখানা সূত্র জানায়, প্রতিদিন এখান থেকে গড়ে ১৭০টি অ্যামোনিয়া সিলিন্ডার বিক্রি হতো। দৈনিক এই খাত থেকে আয় হতো তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। অ্যামোনিয়া বিক্রি বন্ধ থাকায় গত এক মাসে কারখানা প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারখানার উপ-ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান জানান, অ্যামোনিয়া বিক্রির নীতিমালা ও ত্রুটি বিচ্যুতি যাচাই-বাছাই করে কারখানা কর্তৃপক্ষ পুনরায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কবে নাগাদ গ্যাস বিক্রি চালু হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

 

সর্বশেষ খবর