বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কৃষিজমি আবাসিকে ইটভাটা পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও ফল মেলেনি

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি নীতিমালা অমান্য করে ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে ইটভাটা। এ সব ভাটার ধোঁয়ায় ফলদ বৃক্ষ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়রা একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও ফল পাননি। ভাটা মালিকরা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরকে ‘ম্যানেজ করে’ ইটভাটা চালু রেখেছেন বলে অভিযোগ আছে।

জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন স্থানে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কেউ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ভাটা স্থাপন করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরেজমিন দেখা যায়, সদরপুর উপজেলার শৈলডুবি মজুমদার বাজার এলাকায় কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মেসার্স এসএএম ব্রিকস’। এ ভাটার ১০০ মিটার দূরে শৈলডুবি বাজার, ৩০০ মিটার দূরে পূর্ব শৈলডুবি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া চারদিকে রয়েছে বসতবাড়ি ও হাজার হাজার ফলদ গাছ। ভাটাটি নির্মাণকালে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে পরিবেশ অধিদফতর নিষিদ্ধ এলাকা বলে ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু কিছুদিন পর পরিবেশ অধিদফতর ইটভাটা নির্মাণের ছাড়পত্র দেয়। একই উপজেলার বিশ্ব জাকের মঞ্জিল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা এবং কৃষি জমিতে রয়েছে ‘আর এএস ব্রিকস’। এ ভাটার কারণে স্থানীয়রা নানা সমস্যায় পড়ছেন। একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও ফল পাননি ভুক্তভোগীরা। বোয়ালমারী উপজেলার ২৮ নং ত্রিপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে রয়েছে ‘রাজ ব্রিকস’। এ ভাটার কালো ধোঁয়ায় গোটা এলাকা আচ্ছন্ন থাকায় স্থানীয়রা বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পুড়ে যাচ্ছে গাছ-গাছালির পাতা।

বোয়ালমারীর হাসামদিয়া এলাকায় ‘বর্না ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি জমিতে। ইটভাটাটির কোল ঘেঁষে রয়েছে হাসামদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কয়েকশ বসতভিটা। এ ভাটার বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ দিয়ে মালিকের কাছ থেকে নানা হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েক ব্যক্তি। এ ছাড়া সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ‘উসমান অটো ব্রিকস’র কারণে গত বছর পিঁয়াজ দানা চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ বছরও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে কৃষকরা পিয়াজ দানা বুনতে সাহস পাচ্ছেন না। ভাটাটি উচ্ছেদের দাবিতে তারা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। গত বছর জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ইটভাটা সংলগ্ন মাঠ পরিদর্শন করে সাময়িকভাবে ভাটাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও মালিকপক্ষ তা মানেনি।

সর্বশেষ খবর