বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ময়মনসিংহের অর্ধশত নদ নদী অস্তিত্ব সংকটে

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের অর্ধশত নদ নদী অস্তিত্ব সংকটে

মুক্তাগাছার ঠাডাকুর নদীতে এভাবেই ধান চাষ করা হয়

খাঁ-খাঁ করছে ব্রক্ষপুত্রের ময়মনসিংহের অংশ। এ নদে ক্রমাগত পলি জমে ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার সংযোগ মুখ। এ কারণে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার নদীনির্ভর প্রায় আড়াই কোটি মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাইলের পর মাইল জেগে উঠা নদীর চরে এখন আবাদ হচ্ছে হরেক রকম ফসল।

ব্রহ্মপুত্র নদের মতোই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ময়মনসিংহের অর্ধশত নদী-উপনদী-শাখা নদী। ইতোমধ্যে কোনোটি দৃশ্যপট থেকে বিলীন হয়ে গেছে। আবার কিছু নদী পরিণত হয়েছে মরাখালে। জানা যায়, ময়মনসিংহের প্রধান নদ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। এই নদকে ঘিরেই ময়মনসিংহ শহরের গোড়াপত্তন। এক সময়ের প্রমত্তা এই ব্রহ্মপুত্রের অবস্থা এখন রুগ্ন। ভরা মৌসুমেও নদের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। এ নদের পাশাপাশি ময়মনসিংহের বুক চিরে বয়ে চলা ঝিনাই, আয়মন, সুতিয়া, বানার, খিরু, ঠাডাকুড়া, ঘরোটা, সিমাহালি, নরসুন্দা, বোখাই, নিতারী, সোমেশ্বরী, কংশ, গুনাই, কাঁচামাটিয়া, পানকুরা, সাইদুল, মগরা, রাংরা, খারমোরী, মহাদেব, যদুকাটা, ধনু, বোয়ালাই, শিরখালি, সিংড়া, চেল্লাখালি, মতিচিক, চালহি, বংশাই, মানস, পুতিয়া, জিনজিরাম, সুবনফিরি, বলেশ্বর, ভোগাই কংসা, কউলাই, সিলাই, খারমেনি, সাতারখালি, তারাটিয়া, ঘাগটিয়া, ঝগড়াখালি, নবগঙ্গা, মরা নেতাই, বেনিপোড়া, রূপালী, রাঙ্গানিয়া, মেকিয়ারকান্দা, মালিঝি, খড়িয়া, বালুয়া, আনই, আখিল, বাইজানাসহ প্রায় অর্ধশত নদীর অবস্থাও সংকাটাপন্ন। ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার সব নদ-নদী এখন নাব্যতা সংকটে। নদীগুলো খননের পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন নেই। নৌ আবহাওয়া দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী এআরএফএম আজহার বলেন, ‘নদীগুলো ড্রেজিং করা জরুরি। বেশকিছু নদী সার্ভে করা হয়েছে। ময়মনসিংহের নদী রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ রয়েছে।’ পাউবো সূত্র জানা যায়, এক সময়ে ব্রহ্মপুত্রের প্রশস্ততা ছিল ১২-১৪ কিলোমিটার। আজ তা ভরাট হতে হতে স্থানভেদে ১০০-২০০ মিটারে ঠেকেছে। নদের সেই নাব্যতাও নেই। ভারত সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ায় কংস, নেতাই, ক্ষীরু, মেনান ও শাওয়াল নদ-নদী পাহাড়ি ঢলের ওপর নির্ভরশীল। এখন ঢল নামলেও পলি জমার কারণে পানি নেই। এ ছাড়া সুতিয়া, শীলা, বানার, নরসুন্দা, কাঁচামাটিয়ার পানি নির্ভরশীল ব্রহ্মপুত্রের ওপর। ব্রহ্মপুত্রে নাব্যতা খনন নেই বলে ওই নদ-নদীগুলোও সরু খাল হয়ে গেছে। বিভিন্ন উপজেলায় নানা প্রকল্পের মাধ্যমে ছোট নদীগুলো খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ। কংশ নদ ভরা বর্ষায় থৈ থৈ করলেও বাকি সময়টুকু থাকে মৃতপ্রায়। তাছাড়া ধোবাউড়া উপজেলার সাতারখালি, তারাটিয়া, ঘাগটিয়া, ঝগড়াখালি, নবগঙ্গা, মরা নেতাই, বেনিপোড়া, রূপালী নদী, রাঙ্গানিয়া ও মেকিয়ারকান্দা নদীতে চলছে দখল। মুক্তাগাছা আয়মন নদী ক্রমেই খালে রূপান্তর হচ্ছে। এখানকার শাখা নদী ঠাডাকুড়ার অবস্থা আরও খারাপ।

সর্বশেষ খবর