শিরোনাম
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

গাইড বই পাঠ্য করতে কোটি টাকার বাণিজ্য!

গাইড কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে নিষিদ্ধ গাইডকে পাঠ্য বইয়ের সহায়িকা বলছেন কোনো কোনো শিক্ষক। বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন কোমপানির গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন তারা। নামিদামি গাইড কোমপানিগুলো শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই জেলার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে তাদের বই বুকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করছে। এভাবে চলতি বছর জেলার সাত উপজেলায় কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করেছে সংশ্লিষ্ট কোমপানির প্রতিনিধিরা। জানা যায়, নাটোর শহরের মর্ডান, মুক্তধারা ও বইমেলা লাইব্রেরি বিভিন্ন কোমপানির হয়ে তাদের গাইড পাঠ্য করার জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা চুক্তি করেছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এরপর তারাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিজ দায়িত্বে চুক্তির টাকা পৌছে দিচ্ছেন। গাইড ব্যবসা করেই তারা ক্ষান্ত হননি, লাইব্রেরিমালিকরা নিজেরাই জড়িয়েছেন প্রকাশনা ব্যবসায়। অভিযোগ আছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি টাকা ছড়িয়েছে আদিল ব্রাদার্স। এই কোমপানি স্কুলভেদে দুই থেকে চার লাখ পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে নিজেদের বই পাঠ্য করেছে। আদিল ব্রাদার্সের পর জেলায় গাইড বিক্রির শীর্ষে রয়েছে লেকচার পাবলিকেশন্স। জেলা শহরকে টার্গেট করেই মূলত বইয়ের ব্যবসা চালাচ্ছে কোমপানিটি। অভিযোগ আছে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে মোটা অংকের লেনদেনের বিনিময়ে বড়াইগ্রাম উপজেলার ৫৫টি আনন্দ স্কুলে তাদের বই পাঠ্য করিয়েছে লেকচার প্রকাশনী। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মিথ্যাচার ও মনগড়া।’

অভিযোগ রয়েছে, নাটোরে গাইড ও নিজেদের প্রকাশিত বইয়ের ব্যবসার শীর্ষে রয়েছে মর্ডান লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটি একসঙ্গে লেকচার, পাঞ্জেরি, জুপিটার, অনুপম, নিউরন, মেজর, জ্ঞানকোষ ও স্মরণিকা প্রকাশনীর বাংলা ব্যাকরণ-ইংরেজি গ্রামার বইয়ের পরিবেশ এই লাইব্রেরি। মুক্তধারা লাইব্রেরি লেকচার, পাঞ্জেরী, অনুপম, জুপিটার ও স্কয়ার গাইডের পরিবেশক। এছাড়া সিসটেমেটিক প্রকাশনীর গ্রামার বই তারা বিক্রি করছে। চাউর আছে, গাইড কোমপানি ও শিক্ষকদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে উপজেলা শিক্ষক সমিতিগুলো। শিক্ষক সমিতিকে খুশি না করলে কোনো বই সহজে পাঠ্য হয় না বিদ্যালয়গুলোতে। ফলে বছরের শুরুতেই মোটা অংকের টাকা যাচ্ছে শিক্ষক নেতাদের পকেটে। তবে বাগাতিপাড়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ বলেন, ‘তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য কেউ কেউ এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বা বাগাতিপাড়ার কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গাইড বইয়ের সঙ্গে সমপর্ক নাই।’ সিংড়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু এ সব অভিযোগকে ভিত্তিহীন, বানোয়াট দাবি করে বলেন, ‘উপজেলার এমন চিত্র কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।’ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী জানান, কোনো প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ গাইড কিনতে বাধ্য করা, সরকারের বিনামূল্যের বই ছাড়া অন্য বই শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বেতন-ভাতা, এমনকি এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন স্কুলে অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর