বুধবার, ৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজশাহীর হিমাগারে বস্তায় ঢুকছে অতিরিক্ত আলু

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানছেন না রাজশাহীর বেশিরভাগ হিমাগার মালিক। নির্দেশনা অমান্য করে তারা এখনো বস্তায় অতিরিক্ত আলু ভরছেন। এসব বস্তা টানতে গিয়ে নিষ্পেষিত হচ্ছেন শ্রমিকরা। এতে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন মানবাধিকার কর্মীরা। এক্ষেত্রে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কোনো কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না। ফলে আলুর হিমাগারগুলোতে এখনো ৮০ কেজি ওজনের আলুর বস্তার ব্যবহার চলছে। কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ শ্রমিক আলুর বস্তার ওজন কমানোর ব্যাপারে আদালতের দেওয়া নির্দেশনার কথা জানেনও না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর মাঠে মাঠে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। জেলার ৩২টি হিমাগারে সেসব আলু নিয়ে ভরছেন মালিকরা। এক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা মেনে হাতেগোনা কয়েকটি হিমাগার মালিক ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ব্যবহার করছেন। বাকিরা এখনো আগের বস্তায় ব্যবহার করছেন। পবা উপজেলার একটি হিমাগারে কাজ করেন শ্রমিক আফসার আলী। তিনি বলেন, বস্তার ওজন কমানোর ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আছে কি না তা তিনি জানেনই না। তাদের হিমাগারে এখনো আগের বস্তাগুলোই আলু ভরতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই হিমাগারের প্রায় ২০০ শ্রমিক এসব বস্তা ট্রাক থেকে নিয়ে হিমাগারে ঢোকাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশের হিমাগারগুলোতে ৮০ কেজি ওজনের বস্তায় আলু সংরক্ষিত হয়ে আসছিল। এতে হিমাগারে শ্রমিকদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কাজ করতে হতো। এ নিয়ে গত বছর উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে শ্রম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতের ওই নির্দেশের পরও অনেকে তা বাস্তবায়নে আগ্রহী হয়ে উঠছিলেন না। তখন এ ব্যাপারে সক্রিয় হয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডাইফ)। গত ২৫ জানুয়ারি ডাইফের মহাপরিদর্শক মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও জারি করেছেন। তাতে শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা অনুযায়ী দেশের সব পুরুষ শ্রমিকের ৫০ কেজি এবং নারী শ্রমিকের ৩০ কেজির বেশি ওজন বহন না করার কথা বলা হয়। কিন্তু উল্টো চিত্র বিরাজ করছে রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে।

রাজশাহী পাটকল সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশনা জারির পর আলু সংরক্ষণের জন্য অন্য পাটকলগুলোর মতো এখানেও ৪০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ২৪ ইঞ্চি প্রস্থের ম্যাশ ব্যাগ প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটি বস্তার দাম রাখা হয়েছে ৪২ টাকা। কিন্তু উত্পাদিত বেশিরভাগ বস্তায় অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি হিমাগার মালিক এসব বস্তা সংগ্রহ করেছে। পবার বিদিরপুর এলাকার রহমান কোল্ড স্টোরেজের একজন শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি বস্তা ভিতরে ঢোকালে শ্রমিকরা পান ৮ টাকা। ছোট বস্তায় আলু ভরলে বেশি সংখ্যক বস্তায় আলু ভরতে হবে। এতে মালিকের খরচ বাড়বে। তাই এই হিমাগারটিতে আগের ৮০ কেজি ওজনের বড় বস্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে শ্রমিকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি তাদের বেশি ওজনের বস্তাও টানতে হচ্ছে। তবে জানতে চাইলে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হিমাগারটির ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম। তিনি দাবি করেন, তাদের হিমাগারে থাকা সব বস্তায় নতুন ছোট। এগুলোতে ৫০ কেজির বেশি আলু নেই। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক দেশের প্রতিটি হিমাগারে ছোট বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন আবদুল হালিম। রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক কামরুল হাসান বলেন, হিমাগারের ৫০ কেজির বস্তা ব্যবহারের জন্য তারা বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিসিএ) জেলা শাখায় চিঠি দিয়েছেন। জনবল সংকটের কারণে সরেজমিনে সবগুলো হিমাগার পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। ধীরে ধীরে সব হিমাগার পরিদর্শন করা হবে। কোথাও ৮০ কেজির বস্তা পাওয়া গেলে সে হিমাগারের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। বিসিসিএ’র জেলার সভাপতি আবু বকর বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের চিঠি পেয়ে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ব্যবহারের জন্য জেলার সবগুলো হিমাগার মালিককে সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ মালিক ব্যবহার করছেন, কেউ কেউ হয়তো করছেন না। এ কারণে এসব মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাদের সংগঠন এর দায় নেবে না।

সর্বশেষ খবর