শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

৯ গ্রামের কৃষক মহাদুশ্চিন্তায়

নব্য নেতার দখলে রাস্তা

নাটোর প্রতিনিধি

নলডাঙ্গা উপজেলায় রাস্তার জায়গা দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করেছেন নব্য আওয়ামী লীগ নেতা। এতে ৯টি গ্রামের কৃষক এখন মহাদুশ্চিন্তায়। অভিযোগ উঠেছে, সিংড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদীর তীরবর্তী প্রত্যন্ত খাজুরা ইউনিয়নের বামনগ্রাম এলাকায় মানুষের চলাচল ও ফসল পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি গায়ের জোরে দখল করে মাটি ফেলে বন্ধ করেছেন নব্য নেতা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ও তার পরিবার। দুই সপ্তাহ আগে তিনি রাস্তা দখল করেন। সম্প্রতি মাটি ফেলে ওই রাস্তা উঁচু করায় মানুষ ও যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে পার্শ্ববর্তী বিলের ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকরা রয়েছেন সংশয়ে। তাদের মতে, রাস্তাটি বন্ধ থাকলে উৎপাদিত ধান ও অন্যান্য শস্য পরিবহনে মণপ্রতি ব্যয় বাড়বে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ না ওঠারই আশঙ্কা। এমন অবস্থায় খাজুরা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে শহিদুলকে বিবাদী করে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে রাস্তাটি দখলমুক্ত করার জন্য। অপর দুই বিবাদী শহিদুলের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম ভোলা ও জুড়ান মিস্ত্রি।

বৃহস্পতিবার বামনগ্রাম গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জামে মসজিদের পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণে দবিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা দখল করে মাটি ফেলে চলাচলের পথ বন্ধ করা হয়েছে। গ্রামবাসী জানায়, চর দখলের মতো রাস্তাটি দখল করায় বামনগ্রামসহ মোহনপুর, গোয়াটঘাট, করেরগ্রাম, পরকোল, পারবিশা, মদনভাঙ্গা ও চানপুরের আন্তযোগাযোগ ও চলাচল বন্ধ হওয়ার  উপক্রম। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে গ্রামবাসী ছুটে আসে। বামনগ্রামের গ্রামপ্রধান আবদুল ওয়াহেদ, বর্ষীয়ান কৃষক আবদুল জব্বার ও গ্রামপুলিশ জসিম উদ্দীন অভিযোগ করেন, শহিদুল রাস্তাটির জায়গা তার ও তার ভাইদের বলে দাবি করেন। এরপর তারা মাটি দিয়ে ভরাট করে ওই রাস্তা। ভয়ে গ্রামের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। রাস্তাটি দিয়ে আগে সাইকেল, ভ্যান, ছোট ট্রাক্টর চললেও দখলের পর একটা সাইকেল পর্যন্ত চলাচলের জায়গা নেই।

কৃষক মোহাম্মদ সুলতান ২০ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছেন। ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা রাখেননি শহিদুলরা। রাস্তাটি বন্ধ থাকলে শুধু ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত নেওয়ার বর্ধিত ভাড়াই উৎপাদন খরচের কাছাকাছি চলে যাবে। একই অভিযোগ করেছেন আরেক কৃষক সুনীল কুমার পাল। শুধু চলাচলের রাস্তাই নয়, রাস্তাটির পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ঘরের জায়গাও নিজেদের বলে দাবি করেছেন শহিদুলরা। নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, শহিদুলরা দলে অনুপ্রবেশকারী। সম্প্রতি বিএনপি থেকে তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। দলের নাম ভাঙিয়ে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করে চলেছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন। তারা প্রকৃতপক্ষে দলের ভোট নষ্ট করার কাজেই নিয়োজিত। শহিদুল ও তার ভাই সাইদুলকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাদের পক্ষে তাদের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, যারা শহীদের নামে অভিযোগ করছেন তারাই রাস্তার জায়গা দখল করে বাড়িঘর তুলে বসবাস করছেন। তারা নিজেদের দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দিলেই চলাচলের রাস্তা হয়ে যাবে। খাজুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ খলিলুর রহমান জানান, শহিদুল ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসী তাকে জানালে স্থানীয় শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপিকে বিষয়টি জানান। এমপি রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে তাদের নির্দেশ দেন। শহিদুলরা এ নির্দেশে কর্ণপাত করেননি। নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। রাস্তা দখল করে চলাচল বিঘ্নিত করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর