পদ্মা নদীতে পানি বেড়েছে। সঙ্গে বাড়ছে স্রোত ও ঢেউ। এতে শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন। ভাঙনের কারণে গত এক মাসে নদী দক্ষিণে ২৭০ থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। নড়িয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। পাঁচ দিনে এ এলাকার ২৮০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বিলীন হয়ে গেছে শওকত আলী এমপি ও মাদারীপুর-১ আসনের এমপি নূরে আলম লিটন চৌধুরীর শ্বশুরবাড়ি। শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়ন থেকে নড়িয়ার ঘড়িসার ইউনিয়নের সুরেশ্বর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকা নদীর ভাঙনপ্রবণ। গত বছর ওই এলাকায় ভাঙনে ৩ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে পদ্মায় পানি বাড়ছে। এতে স্রোত ও ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তাই ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাঁচ দিন ধরে নড়িয়ার মোক্তারের চর, কেদারপুর, ঘড়িসার ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার ১০টি গ্রামে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রবিবার ও শুক্রবার ভাঙনে গ্রামগুলোর ২৭০টি পরিবারের বসতবাড়ির জায়গা বিলীন হয়েছে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে নদীতীরবর্তী মানুষের বসতবাড়ির পাকা স্থাপনা। নড়িয়ার চরজুজিরা গ্রামের জানে আলম দেওয়ান ইতালিপ্রবাসী। ২ কোটি টাকা ব্যয় করে বাড়িতে একটি পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন দুই বছর আগে। ভাঙনে তার বাড়ির অধিকাংশ জায়গা বিলীন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি ওই পাকা ভবনটি ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। বুধবার দেখা যায় ঠিকাদার ওই ভবনটি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতালি থেকে মুঠোফোনে জানে আলম দেওয়ান বলেন, ‘যখন বাড়ি বানাই তখন নদী ছিল ২ কিলোমিটার দূরে। সারা জীবনের পরিশ্রম দিয়ে বাড়ি তৈরি করেছিলাম। নদী সেই বাড়িটি খেয়ে ফেলল।’ এমপি শওকত আলী ও নূরে আলম লিটন চৌধুরীর শ্বশুরবাড়ি নড়িয়া পৌরসভার বাঁশতলায়। বাড়িতে ১০টি পরিবারের বসবাস। গত দুই দিনের ভাঙনে বাড়ির ৮০ ভাগ বিলীন। শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। শরীয়তপুরের জাজিরা-নড়িয়ার পদ্মার ডান তীর সুরক্ষা প্রকল্পটির কাজ এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। অক্টোবরের আগে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে না। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কিছু এলাকায় জিও টেক্সটাইল ব্যাগভর্তি বালু ফেলা হবে।’ নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘নড়িয়ার বিভিন্ন গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙতে ভাঙতে নদী উপজেলা সদরের কাছে চলে এসেছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তালিকা পেলে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে।’