শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

হিমায়িত ভ্রূণে গাভীর বাচ্চা

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

হিমায়িত ভ্রূণে গাভীর বাচ্চা

শাহজাদপুরে হিমায়িত ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া উন্নতজাতের গাভীর বাচ্চা পরিদর্শন করছে গবেষকদল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বৈজ্ঞানিকভাবে সংরক্ষিত হিমায়িত ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে উন্নতজাতের গাভীর ছয়টি বাচ্চা জন্ম হয়েছে। হিমায়িত ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গাভীর বাচ্চা জন্ম হওয়ায় এটাই বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য। গাভীর ভ্রূণ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাচ্চা জন্মদানে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের গবেষক দল। এদিকে, রোগের কারণে যে সব গাভী বাচ্চা জন্ম দিতে পারছিল না ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে উন্নতজাতের বাচ্চা হওয়ায় লাভের আশায় এ পদ্ধতি গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করছেন খামারিরা। আর গবেষকরা বলছেন, একটি গাভীর ভ্রূণ সংগ্রহের পর তা থেকে এক বছরে অন্তত দশটি উন্নতজাতের বাচ্চা জন্ম দেওয়া সম্ভব। ফলে দেশেই উন্নতজাতের গরু জন্ম হওয়ায় দুধ-মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ। কেজিএফ গবেষণা প্রকল্পের পিএইচডি ফেলো ডা. মীর মো. ইকবাল হাসান জানান, স্বল্পতম সময়ে উচ্চগুণসম্পন্ন অধিক সংখ্যক গবাদি পশুর বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২০১৪ সালে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) বিকেজিইটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের গবেষকরা কাজ শুরু করেন। ২০১৭ সালে প্রথম সুপার ওভুলেশনের মাধ্যমে সুস্থ গাভীর জরায়ুতে উৎপাদিত একাধিক ভ্রূণ সংগ্রহ করে এবং সংগ্রহকৃত ভ্রূণ প্রথমে হিমায়িত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে তারপর হিমায়িত ভ্রূণ রিপিড ব্রিডিং গাভীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। এ পর্যন্ত শাহজাদপুরে ও বগুড়ার আরডিএ ২২টি রিপিড ব্রিডিং গাভীতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করেছে যার মধ্যে দশটি গাভী গর্ভধারণ করেছে এবং ছয়টি বাচ্চা প্রসব করেছে। প্রকল্পের পিএইচডি ফেলো ডা. মো. নজরুল ইসলাম সুপার ওভুলেশনের মাধ্যমে গাভীর জরায়ুতে একাধিক ভ্রূণ উৎপাদন ও সংগ্রহ নিয়ে কাজ করেছেন। ফেলো ডা. মো. মাসুদুর রহমান গাভী হতে সংগ্রহকৃত ভ্রূণ হিমায়িত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন। প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা জানান, সাধারণ নিয়মে একটি গাভী বছরে একটি মাত্র বাচ্চা প্রসব করতে পারে। আর কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গাভীর জাত উন্নয়ন একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার ও ব্যয় সাপেক্ষ। কিন্তু সুপার ওভুলেশনের মাধ্যমে একটি উন্নতজাতের গাভী ও ষাঁড় বা ষাঁড়ের সিমেন দিয়ে প্রথমবার প্রজননেই একাধিক উন্নতজাতের ভ্রূণ উৎপাদন করে তা দেশীয় জাতের একাধিক গাভীতে প্রতিস্থাপন করে একাধিক উন্নত জাতের বাচ্চা উৎপাদন করা যেতে পারে। দেশে দুগ্ধবতী গাভীর একটি বড় সমস্যা হলো এক বা একাধিকবার বাচ্চা প্রসব করার পর সে বার বার গরম হয়। কিন্তু প্রজনন করলেও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পরেও সে গর্ভধারণ করতে পারে না। এ সমস্যাকে আমরা গাভীর রিপিড ব্রিডিং বলে থাকি। এ সব গাভীতেও ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করে সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। একটি গাভীতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে পাঁচ শত টাকা খরচ হয়। যখন বেশি ভ্রূণ সংরক্ষণ, হিমায়িত ও প্রতিস্থাপন করা হবে তখন খরচ আরও কমে যাবে। তিনি বলেন, শাহজাদপুরে এ পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্ম বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য। এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে চালু হলে বাংলাদেশে গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য হবে। দেশে মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। শাহজাদপুর দ্বাবাড়িয়া গ্রামের খামারি আবদুল মজিদ জানান, রোগের কারণে তার গাভী গরম হলেও বাচ্চা জন্ম দিতে অক্ষম ছিল। কিন্তু এ পদ্ধতিতে তার গাভী একটি উন্নতজাতের বাচ্চা প্রসব করেছে। যে কারণে এলাকার খামারিরা এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। গবেষণার ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক ডা. নজরুল ইসলাম জানান, এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া হলে এ অঞ্চলে গাভীর বাচ্চা উৎপাদনের সমস্যা শতকরা ৮০% সমাধান হবে এবং খামারিরা লাভবান হবেন।

 

সর্বশেষ খবর