চলাচলের রাস্তা না থাকায় ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় আছে তিনটি পরিবার। সড়কের অভাবে এ সব পরিবারের মুমূর্ষু রোগীদের নেওয়া যাচ্ছে না হাসপাতালে। এরই মধ্যে বিনাচিকিৎসায় দুই সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। দেয়াল ভেঙে এবং জেলা কারাগারের ভিতর দিয়ে তাদের লাশ বের করে দাফন করতে হয়েছে। সম্প্রতি এমন ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় উঠে। ঘটনাটি ঘটে নরসিংদীর ভেলানগর স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায়। জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে কিউট কসমেটিক কোম্পানির মেশিন মেকানিক শাখাওয়াত হোসেন ভেলানগরে সাড়ে তিন শতাংশ জমি কেনেন। ওই জমিতে আধা পাকা ভবন বানিয়ে বসবাস শুরু করেন। ৬-৭ বছরে আগে শাখাওয়াতের বাড়ির চারপাশে বসতি গড়ে উঠে। এতে বন্ধ হয়ে যায় তার বাড়িতে যাতায়াতের পথ। এরপর থেকে ১০ ইঞ্চি প্রস্থের সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে শাখাওয়াতসহ আরও দুই পরিবারের লোকজন। এক বছর আগে হৃদরোগে শাখাওয়াত হোসেন মারা যান। তার লাশ বের করা নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। পাশের বাড়ির দেয়াল ভেঙে মরদেহ বের করে দাফন করা হয়। এরপর থেকে রাস্তা বড় করার জন্য শাখাওয়াতের পরিবার দৌড়ঝাঁপ করলেও ফল হয়নি। সম্প্রতি শাখাওয়াতের ছোট ভাই আহসান হাবিব (৩২) স্ট্রোক করেন। কিন্তু রাস্তা না থাকায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। অনেকটা বিনাচিকিৎসায়ই মারা যান আহসান। এরপর লাশ বের করা নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। নিরুপায় হয়ে এলাবাসী দমকল বাহিনীকে খবর দেন। দমকল বাহিনী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা যান জেলা কারাকর্তৃপক্ষের কাছে। মানবিক বিবেচনায় কারাকর্তৃপক্ষ সীমানাপ্রাচীর টপকে জেলাখানার প্রধান ফটক দিয়ে লাশ বের করার অনুমতি দেয়। শাখাওয়াতের স্ত্রী আনোয়ারা বলেন, ‘বাড়িটি যখন কেনা হয়েছিল তখন তিন দিক দিয়ে যাতায়তের রাস্তা ছিল। ৫/৬ বছরের মধ্যে বাড়ির চারপাশে স্থাপনা গড়ে তোলেন বিত্তশালীরা। বাড়ির ঠিক সামনে গড়ে উঠে একটি স্কুলের অডিটরিয়াম। রাস্তার জন্য আশপাশে সবার কাছে গিয়েছি, কেউ দেয়নি। পৌর কর্তৃপক্ষের স্মরণাপনও হয়েছিলাম। তারাও সমাধান দিতে পারেনি।’ লাশ উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া দমকল বাহিনীর নূরুল হক বলেন, ‘বাড়িটিতে যাতায়তের জন্য যে জায়গা আছে, তাতে একটি মানুষ সোজা হয়ে হাঁটতে পারবে না।’ জেলসুপার নজরুল ইসলাম জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে জেলাখানার ভেতর দিয়ে যাওয়া-আসার সুযোগ নেই। দাফনের জন্য লাশ বের করার জায়গা না থাকায় মানবিক দিক চিন্তা করে অনুমতি দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা এএইচএম জামেরী হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখন যেহেতু নজরে এসেছে, সব পক্ষকে নিয়ে স্থায়ী সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো।’