সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গরিবের ঠিকানা ‘চমেক রোগী কল্যাণ সমিতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে এক শিশুকে ভর্তি করিয়েই উধাও হয়ে গেলেন অজ্ঞাত মহিলা। তারপর ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিকে জানানো হলো। সমিতি তখন শিশুটিকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলল। তারপর তারা পথশিশু নিয়ে কাজ করে এমন একটি উন্নয়ন সংস্থার কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করল। আরও অনেক পরে নানাভাবে খোঁজখবর করে শিশুকে তার পরিবারে হস্তান্তর করা হলো। এরকম উদ্যোগ নিয়েই এগিয়ে চলেছে চমেক হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি। গরিব, অসহায়, পথশিশু এবং অজ্ঞাত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে সমিতি। আর এর ভিতর দিয়েই গরিব-অসহায় রোগীদের কাছে আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠেছে এই সমিতি। এখন এ সমিতি তাদের ভরসার প্রতীক। রোগী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি থাকা গরিব, অসহায় ও ওষুধ কিনতে না পারা রোগীদের তারা নানাভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসে প্রায় ১৬০০ রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০ হাজার ৯৮ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সমিতির পক্ষ থেকে ১৪ জন পথশিশুকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে পুনর্বাসন, ৪২ জন অজ্ঞাত রোগীকে ওষুধ প্রদানসহ নানাভাবে সেবা দেওয়া হয়েছে। চমেক হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি এস এম মোরশেদ হোসেন বলেন, ‘রোগী কল্যাণ সমিতি নিয়মিত অসহায় ও গরিব রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সমাজের বিত্তবান মানুষের আর্থিক সহায়তা এবং যাকাতের টাকার মাধ্যমে সমিতির অর্থের সংস্থান হয়। হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে খবর পেয়ে কিংবা সমিতির পক্ষ থেকে ওয়ার্ডে গিয়ে খোঁজ নিয়ে অসমর্থ রোগী খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে।’  রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ সাহা বলেন, ‘গত জুলাই মাসে এক হাজার ৬১৫ জন রোগী, আগস্ট মাসে এক হাজার ৬৩৫ জন, সেপ্টেম্বর মাসে এক হাজার ৬৫৯ জন এবং অক্টোবর মাসে এক হাজার ৭৮৬ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর বাইরেও দুর্ঘটনায় আহত রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে পুনর্বাসন, পাহাড়ধসে আহত ১৬ রোগীকে মাসব্যাপী চিকিৎসা দেওয়া, অজ্ঞাত মানসিক প্রতিবন্ধীকে চিকিৎসা, পিতামাতা কর্তৃক পরিত্যক্ত দুটি শিশুকে চিকিৎসা শেষে একজনকে আইনগত অভিভাবক এবং অপরজনকে সরকারি ‘বেবি হোমে’ হস্তান্তর এবং দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত ২২ রোগীকে বছরব্যাপী নিয়মিত ওষুধ প্রদানসহ নানাভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

১৯৬২ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা হওয়া এই রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৯৫ হাজার ৯০১ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া চলতি বছর সমিতির অর্থে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডের বারান্দায় এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় থাই গ্লাস প্রদান, ফিজিক্যাল মেডিসিন ওয়ার্ডে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায় থাই গ্লাস দিয়ে কক্ষ তৈরি, গাইনোকোলজি ওয়ার্ডে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় একটি কলপোস্কপ মেশিন ক্রয় ও ৫০ হাজার টাকায় ফ্লোর টাইলস প্রদান, শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে ৫ লাখ টাকার চিকিৎসা উপকরণ প্রদান, কার্ডিওলজি বিভাগে হেলথ ডেস্ক স্থাপন, ৩৫ হাজার টাকার ওষুধ প্রদান, ১ লাখ ৩২ হাজার টাকায় ২২টি হুইল চেয়ার, ১৯ হাজার ৮০০ টাকায় ১৮ জোড়া ক্র্যাচ, ৩ হাজার টাকায় নেবুলাইজার মেশিন ক্রয়, ৬০ হাজার টাকায় ফিজিওথেরাপি উপকরণ, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিছানার চাদর-বালিশ-বালিশের কভার ক্রয়, ৩১ হাজার ৫০০ টাকায় ৯টি বেড ফোম প্রদান করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর