মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফিরছে চাওয়াই নদীর যৌবন

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

ফিরছে চাওয়াই নদীর যৌবন

ফিরে আসছে পঞ্চগড়ের ঐতিহাসিক চাওয়াই নদীর যৌবন। সম্প্রতি এই নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে। খননের ফলে নদীর হারিয়ে যাওয়া প্রবাহ শুরু হয়েছে। ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই নদী ¯্রােত হারিয়ে মরে যেতে বসেছিলো। মহান মুক্তিযুদ্ধে এই নদীর উপরে থাকা একটি ব্রিজ ধ্বংস করেছিলো খান সেনারা। অমরখানা এলাকায় মুক্তিসেনাদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় এই নদীর দুই পাড়ে। কিন্তু নদী পার হতে পারেনি খান সেনারা। তার আগেই স্বাধীনতা এসেছিলো। মাত্র দুই যুগ আগেও এই নদী ছিলো প্রবহমান। ছিলো মাছ। জলজ নানা উদ্ভিত ও প্রাণী। দুই পাড়ের হাজার হাজার একর জমিকে পলি দ্বারা ঊর্বরতা দিতো চাওয়াই। চাষাবাদে দিতো পানি। অন্তত ৩০ গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক এই নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিলো। নদীর মাছের ওপর নির্ভর ছিলো কয়েক হাজার মৎস্যজীবী মানুষ। হঠাৎ নদী নাব্য হারাতে শুরু করে। অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন, নদীর জমি দখল করে চা বাগান গড়ে তোলায় নদীটি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। কৃষক ও মৎস্যজীবীরা পড়েন সংকটে। আশপাশের জমিগুলো হারাতে থাকে ঊর্বরতা। পানি নেমে যায় গভীরে। মৎস্যজীবীরা অন্যকাজে জড়িয়ে পড়ে। দেশি মাছের অভাব দেখা দেয়। এমন অবস্থায় সরকার নদী খননের ব্যাপক উদ্যোগ নিলে চাওয়াই খননের প্রস্তাবনা দেয় পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড।  পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬৪ জেলায় ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনর্খনন প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাওয়াই নদীর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে নদীটির প্রায় চার কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নদীটি ২০ মিটার প্রস্থ এবং ছয় ফিট গভীর করে খনন করা হচ্ছে। উভয় পাড়কে সুরক্ষিত এবং লোক চলাচলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। খননের ফলে সৌন্দর্যও বাড়ছে। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, দিন রাত কাজ করে এই নদী খননের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে খনন চলছে। পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নের জন্য তৎপর রয়েছি আমরা। খনন শেষ হলে এই এলাকার আমূল পরিবর্তন আসবে। চাওয়াই নদীর তীর ঘেঁষা গ্রাম গোয়াল পাড়ার জেলে আমজাদ হোসেন (৬৫)। মাছ ধরাই তার পেশা। চাওয়াই শুকিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে পড়েন সংকটে। প্রতিদিন নদী খননের কাজ দেখতে আসেন তিনি। চোখে ভাসে খুশির ঝিলিক। তিনি জানান, এই নদীতে একসময় এক বেলা মাছ ধরেই সংসার চলতো। কই, শিং, মাগুর, চিংড়ি, বোয়াল, দারিকা, পুঁটি, পয়া, গচি, টেংরাসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। নদী শুকিয়ে গেলে এসব মাছও হারিয়ে যায়। খনন কাজের ফলে নদীতে আবার এসব মাছ পাওয়া যাবে। কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, নদী খননের ফলে জমির ঊর্বরতা বাড়বে। ফসল উৎপাদনে খরচ কমবে। পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, নদীটি খননের ফলে এই এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। নদীর সৌন্দর্য্য ব্যবহার করে ইকো পার্কও গড়ে তোলা যায়। তাহলে আরও কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এলাকার মানুষের মনন বিকাশেও ভূমিকা রাখবে। আওয়ামী লীগ নেতা সফিকুল ইসলাম জানান, সরকারের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয়রা নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। খননের ফলে চাওয়াই নদী আবার আগের রূপে ফিরে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। চাওয়াইয়ের উৎপত্তি ভারতে। সদর উপজেলার অমরখানা এলাকায় এই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ২৩ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে এই নদী মিলিত হয় করতোয়ার সঙ্গে। চাওয়াই নদী খনন কাজে সব সময় তদারকি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহীনুর ইসলাম, তৌহিদুর সারোয়ারের নেতৃত্বে খাদেমুল ইসলাম জনি, মনিরুজ্জামান মনির, হাসান আলী তুষার, মাহমুদুল হাসান, আক্তারুজ্জামান, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান, নজিবর রহমান, রাজসহ একদল তরুণ নদীপ্রেমী খননে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর