শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে ডেকোরেটর শ্রমিকদের

চার মাস ধরে কাজ নেই ব্যবসা বন্ধের পথে

নওগাঁ প্রতিনিধি

খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে ডেকোরেটর শ্রমিকদের

প্রতিদিন দোকান খুলে বসে থাকেন ডেকোরেটর মালিক সোলায়মান। গত চার মাসে কেউ আসেননি কোনো অনুষ্ঠানের ফরমায়েশ নিয়ে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হাংকের (আমাদের) কাম-কাজ কিছু নাইকো চার মাস ধোরে। অ্যাক বেল খাওছি তো আর অ্যাক বেল ছোল-পোল লিয়্যা না খ্যায়া থাকোছি। বাড়িত অসুকের উগি চেকেৎসা হছে না। অ্যাকবার পাঁচ কিজি চ্যাল-ড্যাল পাছনু ডিসি অপিসোত থিনি। অ্যাকন কি দিয়া দিন পার করমু তাই ভাবোছি। কথাগুলো বলতে গিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল ডেকোরেটর শ্রমিক নজরুল ইসলামের। একইভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে নওগাঁর প্রায় ৯০০ ডেকোরেটর শ্রমিকের। রিকশা ভ্যানচালক নূরুল ইসলাম ডেকোরেটর দোকানের মালামাল বহন করেন। তিনি জানান, করোনার আগে ডেকোরেটর থেকে যা আয় হোত তা দিয়ে ভালই চলছিল সংসার। এখন রোজগার বন্ধ। অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে পারছেন না। ডেকোরেটর শ্রমিক আশরাফুলের ছেলে জান্নাতুল নওগাঁ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। আরেক ছেলে হামিম এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। স্ত্রী শাহানাজ বেগম অসুস্থ। আশরাফুল আক্ষেপ করে বলেন- দুই সন্তানকে কি খেতে দেবো আর স্ত্রীর জন্য কিভাবে অসুধ যোগার করবো সে চিন্তায় মাথায় কাজ করে না। আম কিনে ব্যবসা করতে গিয়ে সামান্য যা পুঁজি ছিল তা-ও হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। জেলা ডেকোরেটর মালিক কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি সোলায়মান তালুকদার টিপু বলেন, নওগাঁ সদরে ৪০টিসহ জেলার ১১ উপজেলায় ৩২০ জন ডেকোরেটর মালিক রয়েছেন। করোনার কারণে গত ২০ মার্চ থেকে ডেকোরেটর ব্যবসা একবারে বন্ধ। এ অবস্থায় মালিক, শ্রমিক, বাবুর্চি, ভ্যানশ্রমিক সবাই পড়েছেন বিপাকে। জেলা ডেকোরেটর মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি রাশেদুল আলামিন রন্টু বলেন, ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম। এখন পর্যন্ত সারা পওয়া যায়নি। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, ইতিমধ্যে ডেকোরেটর শ্রমিকদের মধ্যে কিছু খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। ডেকোরেটর মালিকদের মধ্যে কেউ বেশি সমস্যায় পড়লে বিশেষভাবে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। এদিকে করোনা দুর্যোগের কারণে সব ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ থাকায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের কাঁধেও চেপেছে লোকসানের বোঝা। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ব্যবসাতো দূরের কথা, নিজেদের টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। টানা বন্ধে ডেকোরেটর সরঞ্জাম গুদামে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় চার মাস ধরে উপজেলার অর্ধ-শতাধিক ব্যবসায়ীর আয় রোজগার বন্ধ থাকায় কয়েকশ মালিক-শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম  জানান, ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সহায়তা চেয়ে কোনো আবেদন পাইনি।

সর্বশেষ খবর