রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাঙনে বাস্তুহারা হাজার হাজার মানুষ

ঠাঁই হয়েছে বাঁধ কিংবা অন্যের জায়গায়, দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

তিস্তা-ধরলার ভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছেন নদী-তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ। একদিকে করোনা অন্যদিকে নদী ভাঙনে দিশাহারা তারা। ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ পরিবার পায়নি সরকারি ত্রাণ। যারা সামান্য পেয়েছেন তাদেরও নতুন করে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত ২৫ জুন থেকে জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তা ও ধরলা তীরবর্তী প্রায় দেড় হাজার পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা হারিয়েছে। এ সব পরিবারের প্রায় সবাই বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ কিংবা অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। আদিতমারী উপজেলার দক্ষিণ বালাপাড়ার কৃষক আমির হোসেনে রাত কাটছে বাঁধের ওপর। তিনি বলেন, ‘আটজনের সংসার নিয়া মুই যে অবস্থাত আছোং সেটা কয়া শ্যাষ করবার পাবার নং। মোর বুক ফাটি যাবার নাগচে। চোখের সামনোত বসতভিটা আবাদি জমি তিস্তাত চলি গ্যাইছে। এখন কি করি খ্যাং, দিশে পাচ্ছি না।’ সদর উপজেলার মোগলহাট রমনা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত শেফালী বেগম বলেন, ‘হামার সোকগুলা জমাজমি নদের গর্ভে চলে গ্যাছে। হামার অ্যালা কোনো জমি নাই। মোর সওয়ামি ভ্যান গাড়ি চালায় অ্যালা। ছওয়া-পোয়াক ঠেকঠাক খাবার দিবার পাবার নাগছোং না।’ শেফালীর স্বামী মনির ইসলাম জানান, করোনার কারণে তাদের রোজগার কমে গেছে। দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে ঘর ছাড়তে হয়েছিল। এরপর ভাঙনে সব হারিয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে। জমি কেনার সামর্থ্য নেই তাই অপেক্ষায় আছেন কবে চর জাগবে, কবে জমি ফিরে পাবেন। এই গ্রামের ভাঙনকবলিত পরিবারের আট বছর বয়সী শিশু জিয়ন ইসলাম বাঁধের ওপর পলিথিনের ঝুঁপড়ি ঘরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকছে। জিয়ন বলে, ‘হামার খুব কষ্ট। হামার খাবার নাই, জামা নাই। হামার পেটোত ভোগ (ক্ষুধা) নাগি থাকে।’ তিস্তার ভাঙনে বাড়ি-জমি হারিয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী গ্রামের ঝন্টু মিয়া সরকারি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হামারগুলা কষ্টের শ্যাষ নাই। নাই খাবার, নাই থাকার জাগা। আংগো কষ্ট কেডায় দ্যাখবো।’ লালমনিরহাট পানি উন্নযন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যা এবং বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সময় তিস্তা ও ধরলা নদীরভাঙনে প্রায় সাড়ে দেড় হাজার বসতভিটা ও কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জেলার প্রায় ৩৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাট ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাম্মী কাওসার বলেন, ‘যারা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদের প্রাথমিকভাবে ২০-৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুই থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত নগদ টাকা সহায়তা করা হয়েছে। সরকারি খাস জমিতে ঘর তৈরি করে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর