শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সংকটে নওগাঁর মৃৎশিল্প

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

সংকটে নওগাঁর মৃৎশিল্প

দিন দিন সংকট বাড়ছে নওগাঁর মৃৎশিল্পের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের প্রাচীনতম শিল্প মৃৎ। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা তাদের হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞানের মধ্য দিয়ে তৈরি করে থাকেন হরেক রকমের পণ্য। কালের বিবর্তনে নওগাঁয় মৃৎপণ্যের চাহিদা দিন দিন কমেছে। এতে করে আর্থিক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন মৃৎশিল্পীরা। ‘মৃৎ’ মানে মাটি আর ‘শিল্প’ মানে নিজ হাতে তৈরি কোনো সুন্দর জিনিস। এই মৃৎশিল্প আবহমান গ্রাম-বাংলার মাটি ও মানুষের কথা বলে। বর্তমানে মৃৎশিল্পীদের দুঃখ-কষ্টে দিন কাটলেও আত্রাইয়ের মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখে কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে পণ্যটির। ছোটযমুনা নদীর তীরবর্তী দাঁড়িয়ে থাকা উপজেলার রায়পুর ও ভবানীপুর পালপাড়া মৃৎশিল্পের কারণে যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি স্বর্ণালি ছবি। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পটি। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সংকটের মুখে পড়েছে শিল্পটি। তার পরও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে অনেকেই। উপজেলার রায়পুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কুটিরের নয়নাভিরাম মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান। একসময় এই গ্রামগুলো মৃৎশিল্পের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্প-সামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বসবাসকারী মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশই পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থ-সামাজিক কারণে মৃৎশিল্প শ্রেণিভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজষপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। সে কারণে অনেক পুরনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। উপজেলার ভবানীপুর পালপাড়া গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ পাল বলেন, বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের ব্যবসা আজও ধরে রেখেছি। উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় একসময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল কিন্তু বর্তমানে বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে শিল্পটি। উপজেলার রায়পুর গ্রামের বিপ্লব কুমার পাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয় আমাদের। এ ছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছানাউল ইসলাম বলেন, আধুনিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে শিল্পীদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারলে মৃৎশিল্পের বিদেশে বাজার তৈরি করা সম্ভব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃৎশিল্পের প্রসারের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর