ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আখ চাষকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু আখের তরল গুড়। যা স্থানীয় ভাষায় লালি নামে পরিচিত। শীতকালে বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে মুখরোচক খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে এই লালির। বছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আখের মৌসুম হওয়ায় জেলার বিজয়নগর, কসবা ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় আখ থেকে লালি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শতাধিক কৃষক পরিবার। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে লালি তৈরির কাজ। কৃষি কাজের পাশাপাশি বছরে ৩ মাস লালি উৎপাদন করে আর্থিকভাবে তারা অনেকটাই স্বাবলম্বী। এর মধ্যে বিজয়নগর উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার কেজি লালি উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা। ক্ষতিকর কোনো উপাদান ব্যবহার না করায় এর কদর সর্বত্র। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন লালি কিনতে ভিড় করছেন। এক সময় তিন উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে চলত লালি তৈরির উৎসব। তবে বর্তমান সময়ে আখের আবাদ কিছুটা কমে যাওয়ায় লালির উৎপাদনে প্রভাব পড়লেও এখনো তা ধরে রেখেছেন শতাধিক পরিবার। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩ কোটি টাকার লালি উৎপাদন হবে। লালি তৈরির সঙ্গে জড়িতরা জানালেন, এক কানি খেতের আখ দিয়ে তৈরি হয় ১৭/১৮ মণ লালি। প্রতি কানি জমির আখ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় কিনে মহিষ দিয়ে মাড়াই করা হয়। এরপর মাড়াইকৃত আখের রস থেকে আড়াই ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে লালি। প্রতি পাকে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি লালি উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা প্রতি কেজি লালি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যান। যা বাজারে ২০/২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়। সরজমিন দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে আখ মাড়াইয়ের কাজ। কৃষকরা মহিষ দিয়ে আখ মাড়াই করছেন। মাড়াইয়ের সময় মহিষের চোখে কাঠের চমশা পড়িয়ে রাখা হয়। এভাবে থেমে থেমে চলে মাড়াইয়ের কাজ। ঘানির ভিতর থেকে আখ চুষে বের হচ্ছে রস। দিনভর রস সংগ্রহের পর চুল্লিতে সেগুলো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা জ্বাল দেওয়া হয়। শ্রমিকদের পাশাপাশি কৃষক পরিবারের অন্য সদস্যরা এই কাজে সহযোগিতা করছেন। লালি নিতে আসা ক্রেতারা জানান, এখানকার লালিতে কোনো কৃত্রিম উপাদান মেশানো হয় না। এটা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত। আমরা প্রতি বছরই এই সময়টাতে লালি কিনতে আসি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বলেন, আখের লালি গ্রামবাংলার একটি মুখরোচক খাবার। উৎপাদিত লালিতে ক্ষতিকর কোনো দ্রব্য মেশানো হচ্ছে কি না তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা মনিটরিং করছেন।