কুমিল্লার লাকসাম অঞ্চলে পুরোদমে ইট তৈরির মৌসুম চলছে। এসব ইটভাটার জন্য ফসলি জমির উপর চলছে আগ্রাসন। নির্বিঘ্নে কৃষি জমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) কাটা হচ্ছে। পুরো বছরের জন্য ভাটাগুলোতে মজুদ করা হচ্ছে বিশাল আকারের মাটির স্তূপ। এতে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। কমছে খাদ্য উৎপাদন। জানা যায়, বৃহত্তর লাকসামে (লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলায়) প্রায় অর্ধশত বৈধ-অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা অবাধে গিলছে ফসলি জমির মাটি। ভাটার মালিক ও সিন্ডিকেট নামমাত্র মূল্যে কৃষকের আবাদী ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে ভাটায় বিশাল মজুদ করে রাখছে। ভাটা মালিকরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউই আইন মানছেন না। দেদারছে কাঠ পোড়ানোর কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ফসলি জমির উপরিভাগের ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি মাটিতে বেশি পুষ্টি থাকে। যা ফসল উৎপাদনে খুবই সহায়ক। ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের অস্বচ্ছলতার সুযোগে নামমাত্র মূল্যে কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে জমির পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন শক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে। এভাবে টপ সয়েল কেটে নেওয়া চলতে থাকলে একসময় জমিগুলো ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, লাকসাম উপজেলার মুুদাফরগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের হলুদিয়া ও বাউরতলা গ্রামের ফসলি মাঠে মফিজুর রহমানের ৩০ শতক ফসলি জমি থেকে ৩/৪ ফুট গভীরতায় মাটি কেটে নিচ্ছেন স্থানীয় ইটভাটার শ্রমিকরা। অন্যান্য কৃষকের ফসলি জমি উপর দিয়ে ট্রাক্টরযোগে মাটিগুলো স্থানান্তরিত করার কারণে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও সড়ক। এভাবে বৃহত্তর লাকসামে প্রায় অর্ধশত ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমির উপর আগ্রাসন চালালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম জানান, কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিলে জমির উর্বরতা শক্তি সঞ্চয় করতে অনেক সময় লাগে। জমির টপ সয়েল বিক্রি বন্ধ করার জন্য কৃষকদের সচেতনতা জরুরি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।