শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিলুপ্তির পথে হারিকেন

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

বিলুপ্তির পথে হারিকেন

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন বাতি। গ্রামীণ জীবনে রাতের অন্ধকার দূর করতে একটা সময় দেশের ৬৪ হাজার গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন বা কুপি বাতি। দেশের চাকরিসহ নানা পেশায় উচ্চপর্যায়ে থাকাদের মধ্যে খোঁজ করলে লক্ষ্য করা যাবে অনেকেই পড়ালেখা করেছেন হারিকেনের মৃদু আলোয়। গৃহস্থালি এবং ব্যবসার কাজেও হারিকেনের ব্যাপক চাহিদা ছিল। তবে এখন সেই হারিকেনের ঠাঁই জাদুঘরে। হারিকেনের স্থান দখল করেছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক বাতি। বৈদ্যুতিক ও চায়না বাতির কারণে শহরে হারিকেনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। সেই আলোর প্রদীপ এখন গ্রাম থেকেও বিলুপ্ত হচ্ছে। হারিকেন জ্বালিয়েই বাড়ির উঠানে বা বারান্দায় পড়াশোনা করত শিক্ষার্থীরা। রাতের বেলায় পথ চলার জন্য ব্যবহৃত ছিল হারিকেন। হারিকেনের জ্বালানি আনার জন্য প্রতি বাড়িতেই থাকত কাচের বিশেষ ধরনের বোতল। সেই বোতলে রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো। হাটের দিনে সেই রশিতে ঝোলানো বোতল হাতে যেতে হতো হাটে। এ দৃশ্য বেশি দিনের নয়। পল্লী বিদ্যুতায়নের যুগে এখন আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য কুপি বাতি ও হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি। গ্রামের অমাবস্যার রাতে মিট মিট আলো জ্বালিয়ে মানুষের পথ চলার স্মৃতি এখনো তাড়া করে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ডাক হরকরা গল্পের নায়ক তার এক হাতে হারিকেন আর অন্য হাতে বল্লভ নিয়ে রাতের আঁধারে ছুটে চলে তার কর্ম পালনে। দিন দিন প্রযুক্তি মানুষকে উন্নত করছে। হারিকেন ছেড়ে মানুষ এখন বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুত, সৌরবিদ্যুৎসহ জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়নে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন বিলুপ্তির পথে। এ ছাড়া প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎকে সংগ্রহ করার ও পন্থা আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞানীরা। চার্জলাইট, সৌরবিদ্যুৎসহ বেশ কিছু আলোর জোগান থাকায় এখন আর কেউ-ই ঝুঁকছেন না হারিকেনের দিকে। প্রবীণদের মতে, একসময় হারিকেন দেখতে যেতে হবে জাদুঘরে। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবে ও না হারিকেন কী ও হারিকেনের ইতিহাস! চায়না, জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ খুব দ্রুত চার্জ সংরক্ষণকারী আলোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। একসময় হয়তো চিরতরে বিলুপ্ত হবে হারিকেন।

হারিকেন নিয়ে তাই ছন্দের সুরে বলা যায়, যখন তোমার কেউ ছিল না- তখন ছিলাম আমি, এখন তোমার সব হয়েছে-পর হয়েছি আমি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর